তবে কি যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে গাজায়!

গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ২৩০ জন আহত হয়েছেন।
২০ অক্টোবর, মধ্য গাজার আল-অউদা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক শিশুর দাফন প্রস্তুতির দৃশ্য বিশ্বকে আবারও নাড়িয়ে দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা বারবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও বোমা বর্ষণ করেছে। সর্বশেষ রবিবার ইসরায়েল দাবি করেছে, রাফা এলাকায় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছেন। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল আবারও গাজায় বিমান হামলা চালায়।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, রাফা বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানে তাদের কোনো যোদ্ধার উপস্থিতি নেই। তাদের দাবি, ইসরায়েলের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ইসরায়েলের দাবি ও বাস্তবতা
ইসরায়েল বলছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে এবং ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে দেরি করছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজারো মরদেহ উদ্ধার করতে ভারী খননযন্ত্র প্রয়োজন, যা তাদের হাতে নেই।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েল ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং এসব হামলায় ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার জেইতুন এলাকায় আবু শাবান পরিবারের ১১ সদস্যকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা—যার মধ্যে ছিল সাত শিশু ও তিন নারী।
মানবিক সংকট আরও গভীর
গাজার বড় অংশ এখনো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই ‘হলুদ সীমারেখা’ পেরোলেই গুলিবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে বাস্তুচ্যুত মানুষদের ঘরে ফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল ত্রাণ প্রবেশেও কঠোর সীমাবদ্ধতা রেখেছে। জাতিসংঘকে জানানো হয়েছে, তারা দিনে কেবল ৩০০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে—যা চুক্তিতে নির্ধারিত সংখ্যার অর্ধেক। ফলে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
হামাসের অবস্থান
হামাস বলেছে, তারা ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলছে। নিহত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে তারা কাজ করছে, তবে ধ্বংসস্তূপে ভরপুর এলাকায় তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামাসের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, গাজার বিভিন্ন স্থানে এখনো ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
যুদ্ধবিরতি কি এখনও টিকে আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে এবং পরিস্থিতি ‘খুব শান্তিপূর্ণ’ রাখতে ওয়াশিংটন তৎপর রয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার পর আবারও ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে এবং সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করেছে।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
গাজায় এখনো বারুদের গন্ধ, ধ্বংসস্তূপ আর কান্নার সুর—যেখানে শান্তি শব্দটি আজও কেবল এক অধরা আশার নাম।
মন্তব্য করুন