logo
  • বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের অনিশ্চয়তা: “নিজ দেশে অবৈধ”

অনলাইন ডেস্ক
  ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১০

আল্লাহ মীরের বয়স এখন ৪৫। তার বাবা-মা ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসে পাকিস্তানের কোহাট এলাকায় বসতি গড়েন। মীর সেখানেই জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, বিয়ে করেছেন—সবকিছুই এই মাটিতে। এখন সেই জায়গাতেই তিনি “অবৈধ।”

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে আফগান শরণার্থীদের। পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে থাকা আফগান শরণার্থী গ্রামগুলো বন্ধ করে দ্রুত তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার ৫৪টি আফগান শরণার্থী গ্রাম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে কোহাটের গ্রামগুলোও রয়েছে। মীর বলেন, “আমরা এখানেই জন্মেছি, প্রিয়জনদের কবর দিয়েছি। এখন সব ছেড়ে কিভাবে যাব?”

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে। সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও উত্তেজনা এখনো কাটেনি। ফলে আফগান শরণার্থীরা দুভাবে আতঙ্কে—একদিকে পাকিস্তানের কঠোরতা, অন্যদিকে আফগানিস্তানে ফেরার ভয়।

দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান লাখ লাখ আফগানকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এখন সরকার তাদের নিবন্ধন কার্ড—Proof of Registration (PoR) ও Afghan Citizenship Card (ACC)—অকার্যকর ঘোষণা করেছে। ফলে শরণার্থীরা পরিচয়হীন হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ লাখেরও বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়েছেন। এখনো প্রায় ১২ লাখ PoR কার্ডধারী ও ৭ লাখের বেশি ACCধারী দেশটিতে রয়েছেন।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র কায়সার খান আফ্রিদি বলেছেন, “শরণার্থী গ্রাম বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। আমরা চাই, ফেরত পাঠানো হোক স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে।”

কোহাট অঞ্চলে থাকা সাতটি শরণার্থী গ্রামে এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস করেন। মীরের অভিযোগ, “আমাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

PoR কার্ড বাতিল হওয়ায় এখন মীর চিকিৎসা, শিক্ষা—সব জায়গায় সমস্যায় পড়ছেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক দেশে অবৈধ, যেটিকে আমরা নিজের ঘর বলে জানি।”

পাকিস্তান দাবি করছে, আফগান শরণার্থীরা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে ফিরে গেলে তাদের “পাকিস্তানি” বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ফলে দুই সীমান্তের মাঝখানে আটকে আছে লাখো মানুষের জীবন।

ইউএনএইচসিআর পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে—যাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন, তাদের জোরপূর্বক ফেরত না পাঠাতে। মুখপাত্র আফ্রিদি বলেন, “পাকিস্তানের আতিথেয়তার ঐতিহ্য আছে, এখনই সেই ঐতিহ্য রক্ষার সময়।”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ ড. ইউনূসের
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশকে সহযোগিতার অঙ্গীকার জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারের
গাজার শরণার্থী শিবির ও স্কুলে ইসরায়েলের বোমা হামলা
12