logo
  • বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

এক যুগে ফিলিস্তিন যুদ্ধের চেয়ে দ্বিগুণ প্রাণহানি বাংলাদেশের সড়কে

অনলাইন ডেস্ক

  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫৫
ছবি : বণিক বার্তা

গত এক দশকে বাংলাদেশের সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ—যা বর্তমান বিশ্বের দুটি ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্র, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ভয়াবহ বাস্তবতাকে ‘সড়কে গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এক প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন। মোজাম্মেল হক জানান, হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। একই সময়ে গাজায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ।

তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়—এই দুই যুদ্ধ মিলিয়েও যত মানুষ মারা গেছেন, বাংলাদেশের সড়কে নিহতের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ, এক যুগে বাংলাদেশের সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রায় দ্বিগুণ। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি সরকারের দুর্নীতি, ভুল নীতি ও পরিবহন খাতের নৈরাজ্যকে সরাসরি দায়ী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতার আগে নৌ ও রেলপথ ছিল দেশের প্রধান ও নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম। তখন মোট যাতায়াতের ৮০ শতাংশই হতো নৌ ও রেলপথে, আর সড়কপথে চলাচল করত মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ। তাই দুর্ঘটনাও ছিল সীমিত।”

তিনি অভিযোগ করেন, “স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার পরামর্শ ও সরকারের ভুল নীতির কারণে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে শুরু হয় বেহিসেবি লুটপাট, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি। বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে শুধু সড়ক নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়ায় এখন ৮০ শতাংশ মানুষ সড়কপথে চলাচল করছে—ফলে দুর্ঘটনার হারও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পরও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগে নীতি ও কৌশলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে দুর্ঘটনা রোধ, যানজট নিয়ন্ত্রণ বা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আসেনি। সড়ক খাতে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না আনলে কোনো বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধনের উদ্যোগের সমালোচনা করে মোজাম্মেল হক বলেন, “উন্নত গণপরিবহন চালুর পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় নামানোর প্রক্রিয়ায় অজ্ঞতা ও পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক বছরের মধ্যেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর কার্যত অচল হয়ে পড়বে।”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
12