শর্মিলা বা জিনাত নন, পর্দায় প্রথম বিকিনি পরে ঝড় তুলেছিলেন এই অভিনেত্রী

বলিউডে শর্মিলা ঠাকুর যখন প্রথমবার বিকিনি পরে কোনো ম্যাগাজিনের কভারে পোজ দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। ১৯৬০–৭০-এর দশকে এমন সাহসী পদক্ষেপ ছিল বিরল। কিন্তু অনেকেই জানেন না—শর্মিলা, জিনাত আমান, হেলেন বা পারভিন ববি নন, ভারতের প্রথম অভিনেত্রী যিনি সিনেমার পর্দায় বিকিনি পরে হাজির হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন নলিনী জয়ন্ত।
সময়টা ছিল ১৯৫০ সাল—তখনও ভারতীয় সমাজ ছিল গভীরভাবে রক্ষণশীল, নারীর পোশাকে স্বাধীনতার চিন্তাটুকুও অচিন্তনীয়। সেই সময়েই বিকিনি পরে অভিনয় করে আলোড়ন তুলেছিলেন নলিনী জয়ন্ত। সেই বছরই ফিল্মফেয়ার পত্রিকা এক সমীক্ষায় তাঁকে ঘোষণা করেছিল ‘ভারতের সবচেয়ে সুন্দরী অভিনেত্রী’ হিসেবে। কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার বলেছিলেন,
“আমি যতজন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের মধ্যে নলিনী জয়ন্তই সেরা।”
নলিনীর উত্থান ঘটে ১৯৫০ সালেই—অশোক কুমারের বিপরীতে ‘সমাধি’ ও ‘সংগ্রাম’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি হয়ে ওঠেন বলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের একজন। তাঁর আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি, অনন্য সৌন্দর্য এবং সাহসী চরিত্রচিত্রণ তাঁকে দ্রুত আলাদা জায়গায় নিয়ে যায়। পরবর্তী এক দশকে তিনি উপহার দেন একের পর এক হিট সিনেমা—‘জলপরী’, ‘কাফিলা’, ‘নওবাহার’, ‘লকিরেন’, ‘মিস্টার এক্স’, ‘শেরু’ এবং ‘তুফান মেঁ পেয়ার কহাঁ’। দেব আনন্দের সঙ্গে রাজ খোসলার ‘কালা পানি’ (১৯৫৮) ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পান ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
কৈশোরেই তিনি বিয়ে করেছিলেন নিজের প্রথম পরিচালক বিরেন্দ্র দেশাইকে—যিনি বয়সে অনেক বড় এবং তখন বিবাহিত। এই বিয়ের কারণে পরিবার তাঁকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে। পরে তাঁদের দাম্পত্য ভেঙে যায়, আর নলিনী ফিরে আসেন সিনেমায়। এ সময় তাঁর সঙ্গে অশোক কুমারের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়ায়—এমনকি তাঁরা নেপালে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন, এমনটিই জানায় হিন্দুস্তান টাইমস।
১৯৬৫ সালে ‘বোম্বে রেস কোর্স’ ছবির পর নলিনী জয়ন্ত সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮৩ সালে অমিতাভ বচ্চনের ‘নাস্তিক’ ছবিতে মায়ের চরিত্রে ফিরে আসেন। কিন্তু পরে আফসোস করে বলেছিলেন,
“এই ছবিতে কাজ করাটা আমার ভুল ছিল। যে চরিত্রের কথা বলা হয়েছিল, পর্দায় সেটি সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়।”
স্বামী প্রভু দয়ালের মৃত্যুর পর তিনি ধীরে ধীরে সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। একসময় বলিউডের আলোচনায় থাকা এই তারকা হারিয়ে যান চেনা আলো-ঝলমল পৃথিবী থেকে।
২০১০ সালে, মুম্বাইয়ের চেম্বুরে নিজের ছোট্ট বাংলোয় একাকী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নলিনী জয়ন্ত। মৃত্যুর তিন দিন পর প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় এসে তাঁর মরদেহের দাফন সম্পন্ন করেন। প্রতিবেশীরা জানান,
“বাড়িটা তখন অন্ধকার, তালাবদ্ধ; চাকরেরা চলে গেছে, আর নলিনীজির প্রিয় কুকুরগুলো রাস্তায় ঘুরছিল।”
সেই কুকুরগুলোকেই আশ্রয় দিয়েছিলেন পাশের বাসিন্দারা—নলিনী জয়ন্তের নিঃসঙ্গ মৃত্যুর নীরব সাক্ষী হয়ে তারা রয়ে গিয়েছিল।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
মন্তব্য করুন