ভারত ও ইউরোপ থেকে মূলত ওষুধ আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র; নতুন শুল্কে দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। একইসঙ্গে তিনি আরও কিছু পণ্যের ওপর নতুন শুল্কের ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।”
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকারক ও ভোক্তাদের জন্য ওষুধের দাম কার্যত দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
তবে একটি ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ওষুধ উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করছে, তারা এই শুল্ক থেকে ছাড় পাবে। ট্রাম্পের ভাষায়, “যতক্ষণ তারা ‘ব্রেকিং গ্রাউন্ড’ করেছে বা ‘নির্মাণাধীন’ রয়েছে, তারা ছাড়ের আওতায় থাকবে।”
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ১৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে, যা মোট আমদানির প্রায় ৫.৬ শতাংশ। এর মধ্যে কেবলমাত্র প্যাকেটজাত ওষুধই ছিল ৮৬.৪ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে
আয়ারল্যান্ড থেকে ১৪.২% (১২.৩ বিলিয়ন ডলার)
সুইজারল্যান্ড থেকে ১৪% (১২.১ বিলিয়ন ডলার)
জার্মানি থেকে ১৩.৪% (১১.৬ বিলিয়ন ডলার)
ভারত থেকে ১০.৬% (৯.২ বিলিয়ন ডলার)
এছাড়াও ভ্যাকসিন, রক্তজাত পণ্য, টক্সিন ইত্যাদি ছিল ৬৫.১ বিলিয়ন ডলার, যার বড় অংশ এসেছে আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি থেকে।
ঘোষণার পরপরই ইউরোপ ও এশিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শেয়ারমূল্যে পতন দেখা যায়।
সুইস কোম্পানি লনজা, নোভার্টিস ও রোশের শেয়ার গড়ে ১.২% কমে যায়।
জার্মানির মের্ক ও বায়ারের শেয়ার যথাক্রমে ১.১% ও ১.৫% কমে। জাপানে সুমিতোমো ফার্মা ৩.৫%, ওতসুকা ২.৯% ও দাইইচি স্যাঙ্কিও ২% হারে নেমে যায়।
ভারতে প্রধান ফার্মাসিউটিক্যাল সূচক ২% কমে যায়, যেখানে সান ফার্মার শেয়ার ৩% হ্রাস পায়।
অস্ট্রেলিয়ার সিএসএল ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ওপর তাত্ক্ষণিক প্রভাব কম পড়বে। কারণ তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা বা পুনঃপ্যাকেজিং ইউনিট পরিচালনা করছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, ভবিষ্যতে যদি এই শুল্ক জেনেরিক ওষুধের ওপরও আরোপ করা হয়, তাহলে ভারতীয় শিল্প বড় ধাক্কা খাবে।
অন্যদিকে ইউরোপ ও জাপানের অনেক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হতে পারে। কিন্তু এতে খরচ বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।
ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সংগঠন PhRMA সতর্ক করেছে, নতুন শুল্ক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের মতে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের নীতি যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ টানতে সাহায্য করেছে। কিন্তু “প্রতিটি ডলার শুল্কে ব্যয় মানে সেই ডলার আর গবেষণা বা নতুন কারখানায় খরচ করা যাবে না।”
অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম বাটলিন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় কোম্পানিগুলো বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে কিছুটা সুবিধা পেলেও ভোক্তা ও হাসপাতালগুলোকে বেশি দাম গুনতে হবে। তাছাড়া অনেক ওষুধের বিকল্প দেশীয়ভাবে নেই, ফলে ঘাটতিও দেখা দিতে পারে।
ওষুধ ছাড়াও ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন রান্নাঘরের আলমারি, টয়লেট ভ্যানিটি ও সংশ্লিষ্ট পণ্যে ৫০% শুল্ক আরোপ করবেন। অন্যান্য আসবাবপত্র (যা কাপড়, স্প্রিং বা চামড়া দিয়ে মোড়ানো) ৩০% শুল্ক আরোপ করা হবে। এছাড়াও ভারী ট্রাকে ২৫% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উপরের সবকিছুই ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে।