জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগে টেলিগ্রাম ও বোটিম অ্যাপ ব্যবহার করছেন—এমন তথ্য উঠে আসার পর সরকার এ দুটি অ্যাপ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, রাজধানীতে সাম্প্রতিক ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৪৪ জনের মধ্যে অন্তত দেড় শতাধিক ব্যক্তি টেলিগ্রাম ও বোটিম ব্যবহার করে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ ও অনলাইন বৈঠকে অংশ নিতেন।
বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশে এই দুই অ্যাপ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এর আগে রাতে ব্যবহার ধীর করার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
টেলিগ্রাম রুশ বংশোদ্ভূত পাভেল দুরভের তৈরি একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ, আর বোটিম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক, যেখানে ভয়েস কল, ভিডিও কল ও অর্থ লেনদেনের সুবিধা আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত ১৩ মাসে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত’ অভিযোগে ৪৪ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কোর কমিটির বৈঠকে জামিন প্রসঙ্গও তোলা হয়। আলোচনায় বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের সরকারি কৌঁসুলি, আইনজীবী সমিতি ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় দ্রুত জামিন পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জামিনের বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য বলছেন, জামিন পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাঁদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার হওয়ায় আদালত জামিন দিচ্ছে, তাই সঠিক তদন্ত ও মামলা পরিচালনাই জরুরি।
বৈঠকে আরেকটি সিদ্ধান্ত হয়—ডিসেম্বর থেকে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫টি সিম রাখতে পারবেন। বর্তমানে একজনের নামে ১০টি সিম তোলা যায়।
মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও আরসার সাম্প্রতিক অভিযোগ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ বাংলাদেশকে একে অপরকে সহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেছে। বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত ও স্পষ্ট অবস্থান জানানো জরুরি, যাতে ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠিত না হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, পূজা ঘিরে কোনো শঙ্কা নেই। তবে গুজব বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ অন্যরা।

