যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ১৫৩ টন বোমা ফেলার কথা স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাঝেও গাজায় ভয়াবহ বোমা হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের অধিবেশনে নেতানিয়াহু নিজেই জানান, গাজায় ১৫৩ টন বোমা ফেলা হয়েছে।
গত সোমবার নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনে বক্তব্য দেন নেতানিয়াহু। এ সময় তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির মধ্যে দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। জবাবে আমরা ১৫৩ টন বোমা ফেলেছি এবং গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি।”
বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে গাজার যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি ও দ্য মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, তাঁর এই বক্তব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের সরাসরি স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গাজার হামাস–নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।
এসব হামলায় ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন। শুধু রোববারেই (যেদিন ১৫৩ টন বোমা ফেলা হয়) ৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
ইসরায়েলের দাবি, রাফায় হামাস যোদ্ধারা তাদের সেনাদের ওপর হামলা চালায়, যাতে দুই সেনা নিহত হয়। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে গাজায় অব্যাহত আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিলেন।
এর প্রতিশোধ নিতে শুরু হয় নৃশংস বিমান হামলা ও অবরোধ, যা এখনো চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় ৬৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পরও এই হামলার ঘটনা চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তাদের মতে, ইসরায়েলের এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, যুদ্ধবিরতি কার্যত “নামমাত্র”—এবং গাজার ওপর নতুন দমননীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও, নেতানিয়াহু সরকারের বক্তব্যে তাতে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না।
মন্তব্য করুন