নাহিদ ইসলাম
বড় দলগুলো এসপি-ডিসি পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হবে

গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি জুলাই সনদের আওতাধীন, তাই গণভোটের পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভব।
বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টা জুলাই সনদের অংশ। গণভোটের আগে এর কোনো সুযোগ নেই। যারা এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি তুলছেন, তাদের দুরভিসন্ধি রয়েছে।”
তিনি জানান, সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্র উপদেষ্টারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন। তবে অন্যান্য উপদেষ্টাদেরও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে—এ বিষয়গুলো সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলো জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে। তিনি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, যেসব উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।”
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এনসিপি আহ্বায়ক। তিনি বলেন, “কমিশনের আচরণ আমাদের কাছে নিরপেক্ষ মনে হচ্ছে না। কিছু কিছু দলের প্রতি তাদের পক্ষপাত রয়েছে। আমরা শাপলা প্রতীক চাই, কিন্তু কমিশন আইনি ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। প্রতীকের মতো ছোট বিষয়ে যদি ন্যায়বিচার না মেলে, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।”
মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতি হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই শহীদ পরিবারের মামলাগুলোর আসামিরা জামিনে মুক্ত থেকে ভুক্তভোগীদের হুমকি দিচ্ছে। “নির্বাচনের আগে এসব মামলার বিচারের একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
জুলাই সনদ বিষয়ে তিনি জানান, তাদের দল সনদের কাগুজে মূল্য নয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চায়। “আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তিতে সেই আদেশ দেওয়ার বৈধতা কেবল ড. ইউনূসেরই আছে,” বলেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি আরও জানান, ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। যে বিষয়গুলোতে সবাই একমত হয়েছেন, সেগুলোই গণভোটে যাবে। “গণভোটে অনুমোদিত বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ সংস্কারের মাধ্যমে গঠন করবে। সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব,” যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে অংশ নেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
মন্তব্য করুন