টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'দ্য টেলিগ্রাফ'।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছরের জুলাই মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন তিনি, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে।
আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। প্রমাণ হিসেবে ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও ক্লিপ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রসিকিউটর ময়নুল করিম বলেছেন, “সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার প্রত্যক্ষ আদেশেই এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।”
আরও উল্লেখ করা হয়েছে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে, তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন এবং তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন। তার জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে যে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের দমন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের উপরে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ওই দমন অভিযানে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যা তার ১৫ বছরের শাসনের পতনের কারণ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকেই অস্থিরতার শুরু হয়, যা দ্রুত দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “তিনি এক হাজার ৪০০ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা সম্ভব নয়, আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। তার লক্ষ্য ছিল নিজে এবং তার পরিবারের ক্ষমতা স্থায়ী করা। তিনি এখন এক নির্দয় অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং নিজের নিষ্ঠুরতার জন্য কোনো অনুশোচনা নেই।”
শেখ হাসিনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তবে, আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলমান রয়েছে। যেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মন্তব্য করুন