logo
  • বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩১ আশ্বিন ১৪৩২

শুক্রবার সই হচ্ছে ‘জুলাই সনদ’: নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল

অনলাইন ডেস্ক
  ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০৬

জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই সনদে স্বাক্ষর করবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এর মধ্য দিয়েই ‘নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল’ হিসেবে জুলাই সনদ পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

গত মঙ্গলবার রাতে সব দলের কাছে সনদের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর খসড়া সনদ দেওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত সনদে মূল কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলেও কিছু শব্দগত সংশোধন করা হয়েছে। সনদটি তিন ভাগে বিভক্ত—পটভূমি, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। দুই পর্বে ৬৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সব দলের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে এটি নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের সূচনা করবে।”

তবে সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে একমত হলেও ভোটের দিন ও প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে।

সনদে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব রয়েছে। কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সরকারি ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনসভায় দ্বিকক্ষব্যবস্থা, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—এমন বিধানও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তথ্য অধিকার আইন সংশোধন, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতি ও স্বচ্ছতা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠনসহ বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে।

কিছু প্রস্তাবে বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, জাসদসহ একাধিক দলের ভিন্নমত রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, উচ্চকক্ষ গঠন ও নারী আসনের বিধান নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

চূড়ান্ত সনদের শেষে সাত দফা অঙ্গীকারনামা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—জুলাই সনদকে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে পূর্ণ বাস্তবায়ন, জনগণের অভিপ্রায়কে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে স্বীকৃতি, গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের মর্যাদা প্রদান, বিচার নিশ্চিত করা এবং সংবিধান ও আইন সংশোধনের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন।

খসড়া সনদের ভাষায় ‘স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়’ অংশটি বদলে দেওয়া হয়েছে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন’।

এ ছাড়া সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত মতামতের পরিবর্তে বলা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

আগামী শুক্রবারের সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
জুলাই সনদ নিয়ে নতুন সংকট, আজ সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক
রাজনীতি বুঝি না, আমি শুধু অভিনেতা: চঞ্চল চৌধুরী
জামায়াত ইস্যুতে হেফাজতের আমিরের বক্তব্য ব্যক্তিগত
কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতদুষ্ট, তাঁদের অপসারণের দাবি জামায়াত নেতা তাহেরের
12