logo
  • রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

দোহা বৈঠকের পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত

অনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৬
আল জাজিরা

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতার ও তুরকির মধ্যস্থতায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশি দুই দেশের সীমান্তে এক সপ্তাহের ভয়াবহ সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয়ের পর এই বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার সকালে এক বিবৃতিতে জানায়, “আফগানিস্তান ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং উভয় দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালু করতে রাজি হয়েছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দুই দেশ আবারো বৈঠকে বসবে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

এর আগে শনিবার দুই দেশ দোহায় শান্তি আলোচনায় বসে। সীমান্তে কয়েকদিনের সংঘর্ষে বহু নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর এই বৈঠককে দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি ২০২১ সালে কাবুলে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ শনিবার বলেন, “প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ দোহায় পাকিস্তান পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।” তিনি জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুবের নেতৃত্বে আফগান প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে কাতারের রাজধানীতে পৌঁছেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ আফগান তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এক বিবৃতিতে পাকিস্তান জানায়, “আলোচনায় মূলত আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলমান সন্ত্রাসী হামলা বন্ধের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।”

দুই দেশের মধ্যে প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্তে সম্প্রতি ভয়াবহ লড়াই ও পাকিস্তানের বিমান হামলা শুরু হয়। ইসলামাবাদ দাবি করে আসছে যে আফগানিস্তান থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তান কাবুলকে এই গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানায়।

তবে তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। বরং তারা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা আফগানিস্তান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএল)-ঘনিষ্ঠ যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তালেবান সরকারের দাবী ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে ইসলামাবাদও কাবুলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে এমন গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে যারা পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজেদের কঠোর ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

গত শুক্রবার সীমান্তের কাছে এক আত্মঘাতী হামলায় সাতজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও আরও ১৩ জন আহত হন বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শনিবার এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেন, “আফগান প্রশাসনকে অবশ্যই তাদের প্রোক্সি গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যারা আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের ভেতরে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে।”

দোহায় আলোচনার পর যুদ্ধবিরতির এই নতুন সমঝোতা দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র- আল জাজিরা

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
পাকিস্তানি হামলায় তিন ক্রিকেটার নিহত, ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল আফগানিস্তান
সীমান্তে তীব্র লড়াই ও বিমান হামলার পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি
কাবুলে বিস্ফোরণ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপর তালেবান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়াকড়ি আরোপ করল তালেবান সরকার
12