logo
  • মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

সেনা অফিসারদের বিচার সেনা আইনেই চায় এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন

ছবি: সংগৃহীত

  ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১১

গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার সেনা আইনেই হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে বিচার হলে ভবিষ্যতে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে এর আওতায় বিচার করা হোক।


মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, “যে ধরনের গুম-খুন হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে, সে যদি আমার আপন ভাইও হয়, আমি তার ফাঁসি চাইব এবং সেটা জনসম্মুখে চাইব। তবে এই বিচার যেন ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্নের মুখে না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি বলেন, আইসিটি আইন ও সেনা আইন দুটোই সংবিধান স্বীকৃত। তবে কিছু বিষয়ে আইসিটি আইনের সংজ্ঞা সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষার ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই সেনা আইনে বিচার হলে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না।


গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ৩২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে চাকরিতে আছেন এবং সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা করে।


এই প্রেক্ষাপটে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন তাদের অবস্থান জানায়। সাইফুল্লাহ খাঁন বলেন, “আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো ও তুরস্কে স্বৈরশাসকদের বিচারও সেনা আইনের সংশোধনের মাধ্যমেই হয়েছে। আমাদের এখানেও একই পথ অনুসরণ করা উচিত।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আইসিটি আইনে বিচার হলে অভিযুক্তরা ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ করে পার পেয়ে যেতে পারে। কারণ, এই আদালত অতীতে বিভিন্ন রায়ে নিজস্ব অবস্থান পরিবর্তন করেছে।”


সাইফুল্লাহ আরও বলেন, “সেনা আইনে বিচার হলে কোনো অফিসার কখনো আপত্তি করেনি। জনগণের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা আছে, এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে।”
সরকারের ‘আর কোনো সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা নেই’—এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তাহলে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা কি পরিকল্পিতভাবে বাছাই করা? তদন্ত চললে আরও অপরাধী বের হতে পারে। তাই এখনই ফুলস্টপ দেওয়া ঠিক হবে না।”


গুমের বিচার সেনা আইনে সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সেনা আইনে ‘গুম’ শব্দটি নেই, তবে কোনো অপরাধ আইনে না থাকলে কীভাবে বিচার করা যায়, সে প্রক্রিয়া আইনেই উল্লেখ আছে। সেনা আইন কোরআন বা বাইবেল নয়—প্রয়োজনে তা সংশোধন করা যেতে পারে।”


সংগঠনটি মনে করে, যদি আইসিটি অ্যাক্ট অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়, তবে সেনা আইনও প্রয়োজনে সংশোধন সম্ভব। সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে সাইফুল্লাহ বলেন, “আইন পরিবর্তনের ক্ষমতা সংসদের হাতে। তবে যদি সংসদ না থাকে, বিশেষ আদেশের মাধ্যমেও তা করা যায়। তবে ভবিষ্যতের সরকার সংসদে আইনটি অনুমোদন না দিলে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, এই বিচার জনসম্মুখে হোক এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি—জনসম্মুখে ফাঁসি—কার্যকর করা হোক।”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
12