অনেকে বলে তরুণরাই ভবিষ্যৎ, আমি বলি, তরুণরাই বর্তমানঃন প্রধান উপদেষ্টা

তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অনেকে বলে তরুণরাই ভবিষ্যৎ, আমি বলি, তরুণরাই বর্তমান। তারা যেন কেবল বিদ্যমান বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা না করে, বরং নিজেরা কী ধরনের বিশ্ব গড়তে চায়, সেই স্বপ্ন নিজেরাই দেখেন এবং বাস্তবায়নের সাহস রাখেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাষ্ট্র অতিথি ভবন যমুনায় সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আজকের তরুণরা আগের প্রজন্মের মতো নয়। প্রযুক্তি ও নতুন পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে তোমরা ভিন্ন ধরনের মানুষ—প্রায় ‘অতিমানব’। এখন শুধু নিজেকে প্রশ্ন করো, ‘আমি কেমন একটি পৃথিবী গড়তে চাই?’ তারপর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও, কারণ তা ঘটানোর প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তোমাদের হাতেই আছে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুইডেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতারা—অ্যালিস ল্যান্ডারহোম (মডারেট ইয়ুথ পার্টি), আরিয়ান তওয়ানা (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ পার্টি), অ্যান্টন হোল্মলুন্ড (লিবারেল ইয়ুথ পার্টি), ডেক্সটার ক্রকস্টেড (সুইডেন ডেমোক্র্যাটস ইয়ুথ), হান্না লিন্ডকভিস্ট (গ্রীন ইয়ুথ পার্টি) ও ম্যাক্স পেলিন (খ্রিস্টীয় ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ পার্টি)। নরওয়ে থেকে অংশ নেন ওডা রোহমে সিভার্টসেন (ইয়ং কনজারভেটিভস), লার্স মিকায়েল বারস্টাড লোভোল্ড (প্রগ্রেস পার্টি ইয়ুথ) এবং সাইভার ক্লেভে কোলস্টাড (রেড ইয়ুথ)।
এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)–এর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, নর্ডিক প্রতিনিধি কার্যালয়ের উপপরিচালক ক্যারোলিন এবার্গ, কৌশলগত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কির্তিজয় পাহাড়ি ও যোগাযোগ বিশ্লেষক এমিলি আন্দ্রেসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকন আরাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা তরুণ রাজনীতিকদের সঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিরা জুলাই অভ্যুত্থান, তরুণদের অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই ছিল একটি ঐতিহাসিক সময়—বিশেষ করে অসংখ্য তরুণী যখন এক ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আপনারা এমন এক সময়ে এসেছেন, যখন বাংলাদেশ বড় ধরনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, আপনারা এখানে এসে আমাদের তরুণদের সঙ্গে দেখা করুন, তাঁদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা জানুন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবীরা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দাবি করেছিল, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারকে তারা ফ্যাসিবাদের মূল কারণ হিসেবে দেখেছিল। আমরা কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠনের জন্য একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হয়। ত্রিশটিরও বেশি দল মাসের পর মাস আলোচনা করে অবশেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই মাসেই আমরা ‘জুলাই চার্টার’ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি আমাদের জাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে। আমি জানি না, অন্য কোনো দেশে এভাবে কিছু হয়েছে কি না।
প্রধান উপদেষ্টা তরুণ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ দেশের প্রতিটি রাস্তা একটি গল্প বলে। দেয়ালচিত্র, গ্রাফিতি, লেখা—সবকিছুই তরুণদের প্রতিরোধ ও স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর।
আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূসের ‘থ্রি জিরোস থিওরি’ নিয়েও কথা হয়, যার মাধ্যমে তিনি একটি নতুন সভ্যতা গঠনের ধারণা তুলে ধরেন।
এই তিনটি ‘জিরো’ হলো—শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ-কেন্দ্রীকরণ (দারিদ্র্য দূরীকরণ), এবং শূন্য বেকারত্ব, যা উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে অর্জনের আহ্বান জানায়।
মন্তব্য করুন