ভিসা জটিলতায় ভেস্তে গেল আফগান নারী ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক ফেরার স্বপ্ন

বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরার স্বপ্ন দেখছিলেন আফগানিস্তানের নারী ফুটবলাররা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল এক টুকরো ভিসার কাগজে। শেষ মুহূর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাত দলটির খেলোয়াড়দের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, ফলে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টটি বাতিল হয়ে যায়।

আফগান নারী দলের ২৩ জন খেলোয়াড়ের কেউই এখন নিজ দেশে নেই। তালেবান শাসনের পর তারা প্রাণ বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। ফিফার প্রতিভা বাছাই ক্যাম্প থেকে নির্বাচিত হয়ে তারা “আফগান উইমেন ইউনাইটেড” নামে একটি দল গঠন করেন।

ফিফা আয়োজিত FIFA Unites Women’s Series টুর্নামেন্টে অংশ নিতে তাদের ১১ অক্টোবর দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল চাদ ও লিবিয়ার। কিন্তু ভিসা না পেলেও ফিফার নির্দেশে খেলোয়াড়রা বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে জানানো হয়, তারা বিমানে উঠতে পারবেন না। অনেক খেলোয়াড় তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। ২০২১ সালে তালেবান দখলের পর কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়ার ভয়াবহ স্মৃতিটাই যেন আবার ফিরে আসে তাদের মনে।

ফিফা জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবর্তে টুর্নামেন্টটি এখন মরক্কোতে অনুষ্ঠিত হবে। রোববারই সেখানে আফগানিস্তানের প্রথম ম্যাচ হওয়ার কথা। তবে খেলোয়াড়রা জানিয়েছেন, মানসিকভাবে তারা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। প্রায় ৩০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে মরক্কো পৌঁছালেও কেউই খেলার মতো মানসিক প্রস্তুতি পাচ্ছেন না।

ফিফা এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আমরা জানি, খেলোয়াড়দের জন্য এটি ছিল মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন অভিজ্ঞতা। তাদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”

সংস্থাটি জানায়, খেলোয়াড়দের মানসিক সহায়তা দিতে বিশেষ ট্রমা কাউন্সেলর ও ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আফগান নারী ফুটবলারদের নিরাপত্তা ও খেলার অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সুরক্ষা দল, ফিটনেস ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, এমনকি একজন আফগান শরণার্থী পুনর্বাসন প্রশিক্ষকও।

খেলোয়াড়দের মানসিক স্থিতি পুনরুদ্ধারে ইতিমধ্যে দুটি গ্রুপ সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীরা তাদের ট্রমা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফুটবল ফেডারেশন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির সঙ্গে তালেবান সরকারের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকলেও, তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।