logo
  • সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

তারেক রহমানের ফোনে নির্বাচনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেন যারা

অনলাইন ডেস্ক
  ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৮

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনয়ন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সরাসরি প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করছেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যাঁদের ফোন দিচ্ছেন, তাঁরা কার্যত দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক শক্তি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি স্থানীয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া তাই বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও গতিশীল বলে বিবেচিত হচ্ছে।

একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, এবার কেবল সিনিয়রিটি নয়, জনগণের পছন্দ ও মাঠের বাস্তবতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা এলাকায় জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁরাই পাচ্ছেন এই কাঙ্ক্ষিত ফোন কল—অর্থাৎ ‘গ্রিন সিগন্যাল’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হবে। ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী তারেক রহমানের ফোন পেয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে তরুণ ও পেশাজীবী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আনতে এবং তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চায় বিএনপি।

জানা গেছে, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪ তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৮ মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১০ ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা-১২ নবী সোহেল, ঢাকা-১৩ ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৫ মামুন হাসান, ঢাকা-১৬ আমিনুল হক এবং ঢাকা-১৪ আসনে ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন।

তুলির প্রার্থী হওয়া বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন। অন্যদিকে, ঢাকা-১৭ আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যা জোট রাজনীতিতে বিএনপির নমনীয় অবস্থানকে ইঙ্গিত করছে।

দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০টি আসনে দল নির্ভার, যেখানে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতভেদ নেই। এসব আসনে থাকছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা—যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩) প্রমুখ।

সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট বিভাগের চার জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিগগিরই ঢাকা বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, এলাকাভিত্তিক গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাই এবার মনোনয়নের মূল মানদণ্ড। একই আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তৃণমূলের মতামতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে।

দলের ভেতরে বিভক্তি রোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—যাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে, সবার কাজ করতে হবে তার পক্ষে। কোনো অভ্যন্তরীণ বিরোধ বরদাস্ত করা হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এক নতুন ধারা তৈরি করেছে। এতে প্রার্থীদের যোগ্যতা, তৃণমূলের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্বের নবায়ন একসঙ্গে ঘটছে—যা আসন্ন নির্বাচনে দলের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
বিএনপি–জামায়াত উভয় দলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে এনসিপি
ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্বাচন দায়িত্বে না রাখার আহ্বান নিয়ে জামায়াতের উদ্বেগ
আরপিও’র ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতীক সংশোধনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বিএনপির
বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকবে: তারেক রহমান
12