সহায়তার ছলে অসহায় নারীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তুরস্কে দাতব্য সংস্থার মালিক গ্রেপ্তার
তুরস্কে অসহায় নারী ও শরণার্থীদের সহায়তার নামে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক দাতব্য সংস্থার মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে সাদেত্তিন কারাগোজ নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিবিসি নিউজ টার্কিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগোজ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় ২০১৪ সালে ‘হোপ চ্যারিটি স্টোর’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি মূলত সিরীয় শরণার্থীদের জন্য খাবার, পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করত। কিন্তু তদন্তে জানা গেছে, সহায়তার আশায় আসা কিছু নারীকে তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার করেন।
ছদ্মনামে সাক্ষাৎ দেওয়া এক শরণার্থী নারী মাদিনা জানান, গৃহযুদ্ধে সব হারিয়ে তিনি ২০১৬ সালে তুরস্কে আশ্রয় নেন। তিন সন্তানকে একা লালন-পালনের দায়িত্বে হিমশিম খেয়ে তিনি সাহায্যের আশায় কারাগোজের সংস্থায় যান। কারাগোজ তাঁকে অফিসের পেছনের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে আলিঙ্গন ও চুম্বনের চেষ্টা করেন। মাদিনা বলেন, “আমি চিৎকার না করলে হয়তো তিনি আমাকে ধর্ষণ করতেন।” পরে কারাগোজ তাঁকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর হুমকি দেন।
ভয়ের কারণে মাদিনা পুলিশে অভিযোগ করেননি। তবে বিবিসিকে তিনি জানান, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।
আরেক নারী নাদা (ছদ্মনাম) বলেন, কারাগোজ তাঁকে সাহায্য পেতে হলে একটি ফাঁকা ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে না গেলে সাহায্য দেওয়া হবে না—এমন হুমকিও দেন। একবার ছেলের জন্য ডায়াপার দেওয়ার কথা বলে তাঁকে পর্দার আড়ালে নিয়ে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করেন কারাগোজ।
তৃতীয় এক নারী বাতুল (ছদ্মনাম) বর্তমানে জার্মানিতে থাকেন। তিনি জানান, সাহায্যের আশায় কারাগোজের সংস্থায় গিয়ে তিনিও যৌন হয়রানির শিকার হন।
বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিন নারী ভুক্তভোগী ছাড়াও সংস্থার দুই সাবেক কর্মীসহ সাতজন সাক্ষী বলেছেন, তাঁরা ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কারাগোজকে এ ধরনের নিপীড়ন করতে দেখেছেন বা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সরাসরি শুনেছেন।
অন্যদিকে, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগোজ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমাদের সংস্থা ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে সাহায্য করেছে। এখানে সারাক্ষণ সিসিটিভি নজরদারি চলে, একা থাকার প্রশ্নই আসে না।”
কারাগোজের সংস্থা বহু বছর ধরে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পেয়েছিল। ২০২০ সালে একটি স্থানীয় পত্রিকার পুরস্কারও জেতে, এবং জাতীয় টেলিভিশনেও সংস্থাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।
তবে এটাই প্রথম নয়—২০১৯ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তখন মামলা হয়নি। পুলিশ জানায়, “ভুক্তভোগী ও সাক্ষীরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানাতে রাজি হননি।”
এইবার বিবিসির তদন্ত প্রকাশের পরই কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং সাদেত্তিন কারাগোজকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাটি তুরস্কজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মন্তব্য করুন

