logo
  • সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

সুদানে আরএসএফের নৃশংসতায় আরব আমিরাতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

অনলাইন ডেস্ক
  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:২৭

সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন বিশ্বের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি। এই যুদ্ধে ইতিমধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব এখনো নীরব—এবং এই নীরবতার আড়ালে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাব।

সম্প্রতি এল-ফাশের শহরটি দখল করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবু পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিকেরা আজও তাদের উদ্দেশে বলছেন—“নাগরিকদের রক্ষা করুন।”

সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে আরএসএফের অবরোধে ছিল। শহরজুড়ে কাদা-মাটির দেয়াল তুলে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে ফেলা হয়। দুর্ভিক্ষে কষ্টে থাকা মানুষ যখন পালানোর চেষ্টা করেছেন, আরএসএফ তখন তাঁদের গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের রক্তে ভেসে গেছে শহরের রাস্তা—যা স্যাটেলাইট চিত্রেও ধরা পড়েছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সরকারি সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই সতর্ক করেছিল—এল-ফাশের হতে যাচ্ছে আরেকটি স্রেব্রেনিৎসা, যেখানে আবারও ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে।

এই হত্যাযজ্ঞে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা অস্বীকার করা কঠিন। তারা আরএসএফকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে। সুদানে আমিরাতের দুটি ঘাঁটি রয়েছে—নিয়ালা ও আল-মালহা। এছাড়া সোমালিয়া, লিবিয়া ও উগান্ডার ঘাঁটি থেকেও আরএসএফে সরবরাহ পাঠানো হয়।

আরএসএফের প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেদতি নামে পরিচিত, আরব আমিরাতকে সুদানের সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে। তাঁর বাহিনীতে এমনকি আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে ভাড়াটে সেনাও আনা হয়েছে—যাঁরা মূলত আমিরাতের স্বার্থে কাজ করেন।

এর মাধ্যমে আরব আমিরাত সুদানের সম্পদ, লোহিত সাগরের উপকূল ও কৃষিজমির ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, এবং ধীরে ধীরে পশ্চিমা ও চীনা প্রভাবের বাইরে নিজেকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ফলে আবুধাবিকে কখনোই আরএসএফে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে বলা হয়নি। যুক্তরাজ্যের বিক্রিত সামরিক সরঞ্জামও সুদানে ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘে সুদান ইস্যুতে যুক্তরাজ্য আবুধাবির পক্ষে না দাঁড়ালে, আরব আমিরাত প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ব্রিটিশ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে এবং এক মন্ত্রীর বিমান মাঝপথে ফিরিয়ে দেয়।

৫০০ দিনের অবরোধে যখন এল-ফাশেরের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে, যখন রাস্তায় সারি সারি লাশ পড়ে আছে—তখনও রাজনীতিকেরা আরএসএফকে ‘নাগরিকদের রক্ষা করতে’ বলছেন। বাস্তবতা হলো, এই নৃশংসতা সম্ভব হয়েছে কারণ আরব আমিরাতের শাসকদের হাতে রয়েছে অঢেল অর্থ, আর সেই অর্থের শক্তিই আজ সুদানের গণহত্যাকে টিকিয়ে রেখেছে।


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
সুদানে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান পোপ লিওর
সুদানে রাস্তায় পড়ে আছে শত শত লাশ, দাফনের কেউ নেই
দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সুদান: গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে একাধিক দেশ
শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ ২০ জন নিহত, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
12