logo
  • শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২

দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সুদান: গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে একাধিক দেশ

অনলাইন ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১১

সুদানে দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই এখন রূপ নিয়েছে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী ‘র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)’ একে অপরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতের মধ্যেই উভয়পক্ষ বিদেশি শক্তির সহযোগিতা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।

জাতিসংঘ যুদ্ধের শুরু থেকেই সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছিল, তবে বাস্তবে সেই আহ্বান উপেক্ষিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সুদানের এই গৃহযুদ্ধে ভেতরে-বাইরে অনেক শক্তিই সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে।

সুদানের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। আরএসএফের নেতৃত্বে আছেন মোহাম্মদ হামদান দাগলো, যিনি একসময় বুরহানের সহকারী ছিলেন।
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২১ সালে যৌথভাবে উৎখাত করেন এই দুই জেনারেল। এরপর তাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়।

এ পর্যন্ত এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। আরএসএফ মূলত কুখ্যাত জানজাওয়িদ মিলিশিয়া থেকে গড়ে ওঠে, যাদের বিরুদ্ধে দারফুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে বুরহানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর পোর্ট সুদান থেকে দেশ পরিচালনা করছে, আর আরএসএফ দারফুরের নিয়ালা শহরে বিকল্প প্রশাসন গড়ে তুলেছে।

মিশর: সেনাবাহিনীর প্রধান মিত্র দেশ মিশর বুরহানকে বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরএসএফের অভিযোগ, কায়রো সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে, যদিও মিশর তা অস্বীকার করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই): সুদানের সেনাবাহিনীর দাবি, ইউএই আরএসএফকে অস্ত্র ও ভাড়াটে সেনা পাঠাচ্ছে। এ কারণে মে মাসে সুদান ইউএই-এর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। জাতিসংঘের কিছু প্রতিবেদনে এই অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।

লিবিয়া: দেশটির নেতা খলিফা হাফতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইউএই-এর কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি নিয়ে আরএসএফকে সরবরাহ করছেন। হাফতার অবশ্য অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

চাদ ও তুরস্ক: সুদানের সেনাবাহিনী বলছে, চাদ ইউএই-এর হয়ে আরএসএফের জন্য সরবরাহ রুট হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে তুরস্ক প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং আরএসএফের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলার জন্য ড্রোন সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে।

ইরান ও রাশিয়া: ২০২৩ সালের অক্টোবরে খার্তুম ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর আরএসএফ অভিযোগ করছে, ইরান সেনাবাহিনীকে ড্রোন দিচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে সুদানের সামরিক সহযোগী। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে একটি সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

কেনিয়া: সেনা-সমর্থিত সরকারের অভিযোগ, কেনিয়া আরএসএফকে অস্ত্র দিচ্ছে। খার্তুমে আরএসএফের একটি অস্ত্রাগার থেকে “মেড ইন কেনিয়া” লেখা গোলাবারুদ পাওয়ার দাবি করেছে তারা। নাইরোবি আমিরাতের সরবরাহকৃত অস্ত্রের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এল-ফাশের ও দারফুর অঞ্চলে সহিংসতায় হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। লাখো মানুষ দেশান্তরিত হচ্ছে প্রতিদিন। বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারসংক্ষেপে, সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন আর শুধু দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই নয়—এটি রূপ নিয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ময়দানে, যার পরিণতি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ ২০ জন নিহত, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
সুদানে ড্রোন হামলায় ৭০ জন নিহত, ধ্বংস হাসপাতাল
12