মিথ্যা মামলায় ৪৩ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন এক মার্কিন নাগরিক, এখন ভারতের নির্বাসনের মুখে

ভুল হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩ বছর কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন সুব্রামনিয়াম “সুবু” বেদাম। তবে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের আগেই তাকে আটক করেছে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই)। সংস্থাটি তাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে—যে দেশে তিনি মাত্র নয় মাস বয়স পর্যন্ত ছিলেন এবং এরপর আর কখনো ফিরে যাননি।
নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে চলতি মাসের শুরুতে সাবেক রুমমেট হত্যার মামলায় বেদামকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। তবুও, ১৯৮৮ সালের পুরনো দেশান্তর আদেশের কারণে আইসিই তাকে আবারও আটক করেছে। সেই আদেশ তখন তার বিরুদ্ধে থাকা হত্যা ও মাদক মামলার রায়ের ভিত্তিতে জারি করা হয়েছিল। হত্যা মামলার রায় বাতিল হলেও, মাদক মামলার সাজা এখনো বহাল রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আইসিই জানিয়েছে, তারা বৈধ আদেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বেদামের পরিবার মনে করছে, তার চার দশক দীর্ঘ ভালো আচরণ, তিনটি ডিগ্রি সম্পন্ন করা এবং জেলজীবনে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
তার বোন সরস্বতী বেদাম বলেন,
“আমরা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার আগেই আবার তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন, সততা ও সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন, তবুও সেটার কোনো মূল্য দেওয়া হলো না।”
আইনজীবী আভা বেনাচ বলেন,
“যদি তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে পাঠানো হয়, তাহলে এটি এক নির্দোষ মানুষের ওপর আরেকটি ভয়াবহ অন্যায় হবে। তিনি ইতিমধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম ভুল সাজা ভোগ করেছেন।”
আইসিই জানিয়েছে, বেদামকে ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে তার পরিবার বলছে, তার ভারতের সঙ্গে কোনো বাস্তব সম্পর্ক নেই। মাত্র নয় মাস বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে তিনি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করছেন। তার বোনের মতে,“এটা যেন তার জীবন দ্বিতীয়বার অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়ার মতো।”
প্রায় চার দশক আগে বেদামকে সাবেক রুমমেট টম কিনসারের হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯ বছর বয়সী কিনসারের লাশ নিখোঁজের নয় মাস পর এক বনাঞ্চলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যার দিন বেদাম তাকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। পরে গাড়িটি উদ্ধার হলেও কেউ তাকে ফেরত আসতে দেখেনি।
শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসা বেদামকে ১৯৮২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে একটি মাদক মামলায় আরও দুই থেকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়, যা আগের দণ্ডের সঙ্গে একযোগে কার্যকর হয়।
চার দশকের অন্যায় কারাবাসের পর মুক্তি পেলেও, সুব্রামনিয়াম বেদামের জীবনে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। ভুল বিচার থেকে মুক্তি পেলেও এবার তাকে দেশান্তরের লড়াই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার পরিবারের মতে,“যে দেশে তার কোনো শিকড় নেই, সেখানে পাঠানো মানে আবারও তার জীবনকে অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া।”
মন্তব্য করুন