অক্সফোর্ডের সহায়তায় বিএমইউতে প্রথমবার ‘ওয়ার্ল্ড ইভিডেন্স-বেইসড হেলথকেয়ার ডে ২০২৫’ উদযাপন

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) প্রথমবারের মতো ‘ওয়ার্ল্ড ইভিডেন্স-বেইসড হেলথকেয়ার ডে ২০২৫’ উদযাপন করেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) দিনভর র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, ই–পোস্টার, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আয়োজনে ছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা।
অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ছিল—প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসার চর্চা বাড়ানো, রোগীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবায় গুণগত পরিবর্তন আনা। বক্তারা বলেন, ইভিডেন্স–বেইসড পদ্ধতি চিকিৎসা ব্যয় কমায়, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও অ্যান্টিবায়োটিকের অপচয় রোধ করে এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে। এতে চিকিৎসক–রোগীর আস্থা বাড়ে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা হয় সাশ্রয়ী ও দক্ষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় বিএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, “বিএমইউ এমন গবেষণা করবে যা প্রমাণ সৃষ্টি করবে, সেই প্রমাণকে ভিত্তি করে গাইডলাইন হবে।”
সভাপতিত্ব করেন ভাইস–চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি জানান, প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবায় মৃত্যুহার কমে এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এড়ানো যায়। সিদ্ধান্তে রোগীর অংশগ্রহণ ও বিজ্ঞান—দুইয়ের সমন্বয় জরুরি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। প্রো–ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো–ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ও প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, ভুল প্রেসক্রিপশন ও বঞ্চনা ঠেকাতে চিকিৎসায় প্রমাণনির্ভরতা নিশ্চিত করতে হবে।
দিনব্যাপী সেশনে ই–পোস্টার ও মাস্টার প্রেজেন্টেশন হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. মোজাম্মেল হক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আহসান হাবীব। ‘ইভিডেন্স–বেইসড মেডিসিন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল অডিট’ বিষয়ে কী–নোট দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ব্রেইন অংগুস। বিতর্ক পর্বের বিষয় ছিল ‘ইভিডেন্স–বেইসড হেলথকেয়ার প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ: হোপস অ্যান্ড ডিসপেয়ার’। প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ; বিশেষ অতিথি বিএমডিসি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস শাকুর ও অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ। শেষে ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়।
বিএমইউ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ‘ওয়ার্ল্ড ইভিডেন্স–বেইসড হেলথকেয়ার ডে’ কর্তৃক ইভিডেন্স অ্যাম্বাসেডর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি গবেষণা, চিকিৎসা উৎকর্ষতা ও তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তে তাদের অঙ্গীকারের স্বীকৃতি। ভাইস–চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে আইকিউএসি–র উদ্যোগে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক ফ্যাকাল্টিকে ইভিডেন্স–বেইসড মেডিসিনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য—একই রোগে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ও তদন্তের অযাচিত পার্থক্য কমানো, মেডিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল অডিটকে চর্চায় আনা।
এবারের থিম ছিল: “Collaborative Knowledge Communication—Reflects the very essence of modern healthcare and education: collaborative, inclusive and built on trust.” আয়োজকরা আশা করছেন, প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসার চর্চা স্বাস্থ্যখাতে গুণগত পরিবর্তনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
মন্তব্য করুন