টঙ্গীর নিখোঁজ ইমাম পঞ্চগড়ে শিকলবন্দি অবস্থায় উদ্ধার, দাবি অপহরণ ও নির্যাতনের

টঙ্গীর বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী (৬০) এক দিনের নিখোঁজের পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে হেলিপ্যাড এলাকার সড়কের পাশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কথা বলতে পারছেন, তবে বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না।
পরিবার জানায়, বুধবার ফজরের নামাজের পর বাড়ি থেকে হাঁটতে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। মুফতি মহিবুল্লাহ হাসপাতালে জানিয়েছেন, “একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ৫ জন এসে আমার মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে এবং আমাকে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেছে।”
উদ্ধার হওয়ার সময় স্থানীয়রা একটি গাছের সঙ্গে পা বাঁধা এবং বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয় এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি দাবি করেন, তার উপর কয়েক মাস ধরে চিঠি-ধমকি চালানো হচ্ছিল। চিঠিতে বলা হতো—ইসকনের নেতা চিন্ময়ের পক্ষে বক্তব্য দিতে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি-দের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে কনটেন্টে সমর্থন জোর করা হচ্ছিল। টাকা দিয়ে মসজিদে নির্দিষ্ট বয়ান করিয়ে নেবার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
মুফতি মহিবুল্লাহ আরও বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সে তুলে আমাকে ৫ জন বিবস্ত্র করে মারধর করেছে। বোতল ভরে সেই বোতল দিয়ে আমার উরুতে মারধর করেছে। তারা প্রমিত বাংলায় কথা বলছিল। তাদের কথাবার্তা শুনে বাংলাদেশি বলে মনে হয়নি। তারা এক এক করে সব আলেমের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়েছে।” তিনি নিরাপত্তা ও বিচার দাবি করেছেন।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর আগে থেকেই মাথায় অস্ত্রোপচারের ইতিহাস রয়েছে। তিনি কিডনি ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, ভোরে ৯৯৯ কল পেয়ে হেলিপ্যাড এলাকায় শেকলে বাঁধা এক বৃদ্ধকে পাওয়া গেছে। পরিচয় নিশ্চিত করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নিখোঁজের পর পরিবারের করা সাধারণ ডায়েরি টঙ্গী থানায় রয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। সুপার বলেন, “উদ্ধারের পর তিনি জানিয়েছেন ভোরে হাঁটতে বের হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে অপহরণ করা হয়েছিল। বিষয়টি তদন্তাধীন। পরিবারের সদস্যরা এলে তাদের কাছে তাকে তুলে দেওয়া হবে।”
ঘটনার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড়ে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইসকনকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে পথসভায় বক্তারা মুফতি মহিবুল্লাহকে অপহরণ ও নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
ঘটনাস্থল ও তদন্ত শুরু হলেও এখনও অভিযোগের প্রমাণপত্র বা অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ সম্পর্কে পুলিশ কোনো চূড়ান্ত তথ্য দেয়নি। পরিবার ও স্থানীয় সমাজচেতনাসমূহ দ্রুত নিরাপত্তা ও ন্যায্য বিচার দাবি করছেন।
মন্তব্য করুন