logo
  • বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

‘কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি’

আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে অভিযোগ দায়ের করলেন এস আলম

অনলাইন ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০৩

আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার দাবি, সরকারের বিদেশে পাচার করা সম্পদ উদ্ধারের উদ্যোগে তার পরিবারের ব্যবসা “কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির” মুখে পড়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সোমবার এস আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (আইসিএসআইডি)-তে সালিশি আবেদন জমা দেন।

আবেদনে অভিযোগ করা হয়, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তারা “নির্বিচারে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্তের লক্ষ্যভিত্তিক অভিযানের” শিকার হয়েছেন। সালিশি নথিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযানের কারণে পরিবারটির “শত শত কোটি ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি” হয়েছে, যদিও ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সরকার শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর, যিনি সম্পদ উদ্ধারের এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অভিযোগ করেছেন যে এস আলম পরিবার দেশের ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। তার প্রশ্ন—“অর্থটা কোথায় গেল?”

এস আলম গ্রুপ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, “এসবের কোনো সত্যতা নেই।”

এই সালিশি আবেদন করা হয়েছে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায়। আইনি নথি অনুযায়ী, এস আলম পরিবারের সদস্যরা ২০২০ সালে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেন এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন।

এর আগে এস আলম পরিবার যুক্তি দেখিয়েছিল, তারা যেহেতু সিঙ্গাপুরের নাগরিক, তাই বাংলাদেশের বৈদেশিক বেসরকারি বিনিয়োগ আইন ১৯৮০-এর সুরক্ষা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।

সালিশি আবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, “বিষয়টি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাবে, তখন আমরা যথাযথ মাধ্যমে জবাব দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে গত ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে তারা আন্তর্জাতিক সালিশিতে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর আগে অভিযোগ করেছিলেন, এস আলম পরিবার দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল করে বিপুল অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা বিপুল পরিমাণ প্রমাণ পেয়েছি, যা দেখায় তারা কত সম্পদ সরিয়েছে। সরকার এখন তাদের ব্যাংকগুলো উদ্ধার করতে বাধ্য হচ্ছে, যেগুলোর নিট সম্পদ ঋণাত্মক।”

অন্যদিকে, সালিশি আবেদনে এস আলম পরিবার বলেছে, সরকার এখনো তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

চলতি বছরের শুরুর দিকে আহসান মনসুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ৪৬৯ একর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ
এস আলমের ৪২ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ
এস আলম গ্রুপের কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
12