logo
  • রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে মৃত্যু, নকশাগত ত্রুটি নিয়ে নতুন প্রশ্ন

অনলাইন ডেস্ক
  ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৬

রাজধানীতে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) এ দুর্ঘটনার পরপরই মেট্রো চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন চলার সময় কম্পন কমাতে এই বিয়ারিং প্যাড ব্যবহৃত হয়।

এই ঘটনা এক বছরেরও বেশি সময় আগের আরেকটি দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একই ধরনের ঘটনায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো চলাচল ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। তখন থেকেই মেট্রোরেল ব্যবস্থার নকশা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল লাইনের নকশাগত ত্রুটির কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, “যেখানে ট্রেন বাঁক নেয়, সেখানে চাপ অনেক বেশি পড়ে। সম্ভবত নকশায় এই অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “বিয়ারিং প্যাডটি সঠিকভাবে আটকানো ছিল না। ফলে এটি অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে পারেনি এবং খুলে পড়েছে।” ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি উন্নত প্রযুক্তির ও চাপ সহনশীল ‘পড বিয়ারিং’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

ড. হাদিউজ্জামান ব্যাখ্যা করেন, “যখন ট্রেন চলে যায়, তখন প্যাডটি কিছুটা সংকুচিত হয় এবং ট্রেন চলে গেলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। যদি এটি কাজ না করে বা খুলে পড়ে, তাহলে পুরো কাঠামোর ওপর ভয়াবহ চাপ পড়ে এবং ঝুঁকি তৈরি হয়।” তিনি আরও জানান, ভূমিকম্পের সময়ও এই প্যাড কাঠামোকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

বিয়ারিং প্যাড মূলত রেললাইনের বাঁকানো অংশে বসানো থাকে। ট্রেনের ওজন ও গতির ফলে সৃষ্ট কম্পন শোষণ করে এটি কাঠামোকে স্থিতিশীল রাখে। প্যাড অকেজো হয়ে পড়লে পিলারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, যা কাঠামোগত ক্ষতি বা ধসের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এই প্যাড ভাইব্রেশন, শক ও ভূমিকম্পের প্রভাব থেকেও কাঠামোকে সুরক্ষা দেয়। ফলে এগুলো ঠিকভাবে না থাকলে ট্রেন চলাচল যেমন বিপজ্জনক হয়, তেমনি নিচ দিয়ে চলাচল করা মানুষের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ে।

এর আগে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একাধিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল।

  • যেসব স্থানে কাঠামোর ওপর বেশি চাপ পড়ে, সেসব জায়গার নকশা যথেষ্ট মজবুত ছিল না। বিশেষজ্ঞরা রাবারের পরিবর্তে টেকসই ধাতব উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
  • ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছর মেট্রোরেল চলেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা সনদ ছাড়া, যা ছিল বেআইনি।
  • ডিটিসিএ’র কাছে কোনো নিরাপত্তা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
  • যাত্রী বা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের জন্য কোনো বিমা ছিল না, ফলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও ছিল না।
  • তদন্ত কমিটি নকশাগত ত্রুটি শনাক্তে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, যদিও তারা পিলারে ক্যামেরা বসিয়ে চাপ পর্যবেক্ষণের সুপারিশ করেছিল।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নকশাগত ত্রুটির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বিভিন্ন কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তারা একটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরাপত্তা সনদ পাওয়ার চেষ্টা করছে এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে যাত্রী বিমা চালুর বিষয়ে আলোচনা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনা মেট্রোরেল ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও নকশা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এনেছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
৭ ঘণ্টা পর মতিঝিল–শাহবাগ রুটে মেট্রোরেল চলাচল শুরু
মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, চাকরির আশ্বাস
দ্বিগুণ মূল্যে মেট্রোরেলের কাজ পেল ভারতীয় কোম্পানি
মেট্রোরেলের পিলার থেকে পড়ে আসা বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন
12