logo
  • রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

দ্বিগুণ মূল্যে মেট্রোরেলের কাজ পেল ভারতীয় কোম্পানি

অনলাইন ডেস্ক
  ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১৯

রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার কাজ পেয়েছে ভারতের লারসন অ্যান্ড টুব্রু (এলঅ্যান্ডটি)। তবে প্রতিষ্ঠানটি এই কাজ পেয়েছে প্রাথমিক অনুমানের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ব্যয়ে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ২০২০–২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) এই খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুক্তি হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়।

ডিএমটিসিএল জানায়, এলঅ্যান্ডটি প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা দাবি করেছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে সংস্থা দাবি করেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সঙ্গে চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার কারণে প্রকল্পটি এই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেওয়া হয়।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা প্রাথমিক দাবির চেয়ে প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছি।”

এই চুক্তির আওতায় মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্টেশনগুলোর লিফট ও এসকেলেটর, ট্রেনের দরজা অনুযায়ী গেট, মনিটর, সিসি ক্যামেরা, সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

তবে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের খরচ ভারতের পাটনা, রিয়াদ বা দুবাইয়ের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। পাটনায় প্রতি কিলোমিটারের খরচ যেখানে ৪০.৭৭ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ঢাকায় তা দাঁড়িয়েছে ২২৬ থেকে ২৫৩ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, তারা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-র কাছে প্রকল্প ব্যয় পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। গত আগস্টে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী জাইকার সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন।

সংস্থাটি বলছে, ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোতে প্রতি কিলোমিটারের খরচ নির্ধারণের জন্য ব্যয় কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত অন্যান্য প্রকল্পেও দরদাতারা প্রাথমিক অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি দর দিচ্ছেন, ফলে কিছু টেন্ডার পুনরায় দিতে হচ্ছে।

ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হয়েছে ২১,৯৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ১.৬ কিলোমিটার মতিঝিল–কমলাপুর অংশে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১,৪৮৭ কোটি টাকা।

এদিকে, এই অংশের নির্মাণকাজে ইতিমধ্যেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে পিলারের কাজ প্রায় শেষ, ভায়াডাক্ট স্থাপনে অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ।

ডিএমটিসিএল আশা করছে, নতুন স্টেশন চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১২৬ কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। সংস্থাটি ভবিষ্যতে ব্যয় কমাতে বিদেশি ইক্যুইটি বিনিয়োগ, বেসরকারি অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় উপকরণ ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “আমরা জাইকাকে স্পষ্ট জানিয়েছি, "বাংলাদেশের মেট্রোরেল প্রকল্পগুলো টেকসই ব্যয়ের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে যাত্রী ভাড়ার আয়ে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়।”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
৭ ঘণ্টা পর মতিঝিল–শাহবাগ রুটে মেট্রোরেল চলাচল শুরু
মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, চাকরির আশ্বাস
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে মৃত্যু, নকশাগত ত্রুটি নিয়ে নতুন প্রশ্ন
মেট্রোরেলের পিলার থেকে পড়ে আসা বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন
12