মুদ্রাস্ফীতি সামান্য কমলেও, কঠোর মুদ্রানীতিতে ঋণ ও বিনিয়োগে ধীরগতি

দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বাজারে মন্দাভাব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। মুদ্রাস্ফীতি সামান্য নিয়ন্ত্রণে এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া মুদ্রানীতি ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে।
গত আগস্টে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮.২৯%। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬%। যদিও এ বৃদ্ধি খুব কম, তবুও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া মুদ্রাস্ফীতির চাপ এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
তবে সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো এবং ই-মানি ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারের কারণে মানুষের আস্থা ফিরেছে। ফলে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) প্রবাহও স্থিতিশীল রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও উন্নতির পথে। মার্চ মাসে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৩১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখায় এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত ব্যবস্থাপনার কারণে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এই স্থিতিশীলতা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কিছুটা কমে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের চালান কমে যাওয়ায় এই পতন ঘটে। তবে পাট, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল খাত স্থিতিশীল রয়েছে।
আশার খবর সেপ্টেম্বরে চালের দাম কিছুটা কমেছে। সরকারের আমদানি উদ্যোগ ও তদারকির ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। সরকার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল ও গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কঠোর মুদ্রানীতি এখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হলেও, বিনিয়োগে গতি ফিরিয়ে আনতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো এবং আর্থিক খাতে নমনীয়তা আনতে হবে। অন্যথায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।
মন্তব্য করুন