জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট মানবে না বিএনপি: মির্জা ফখরুল
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনকে অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র কাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ নানা বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছিলাম।”
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি হাতে পাওয়ার পর দেখা গেছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অজ্ঞাতসারে বাদ দেওয়া হয়েছে। “মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি অফিস থেকে সরানোর বিধান, সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রস্তাবসহ কয়েকটি বিষয়ে সব দল একমত হলেও, তা চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি,” বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “২৮ অক্টোবর সরকারকে দেওয়া ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সংবিধান সংস্কারের দুটি বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়েছে, যার একটি অনুযায়ী সরকার নিজে থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে পারবে—যা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারের পরিপন্থী। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।”
তিনি আরও বলেন, “কমিশনের বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফার ওপর গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু এতে ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া দলগুলোর অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিষয়টি একপেশে ও জবরদস্তিমূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিবের দাবি, “এভাবে প্রস্তাবিত গণভোট আয়োজন মানে হলো এক বছরের দীর্ঘ আলোচনা ও পরামর্শ প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করা। এটি সময়, অর্থ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”
তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, যদি ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হয়, তাহলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে—এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও হাস্যকর প্রস্তাব। সংসদীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে এর কোনো সামঞ্জস্য নেই।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন সম্ভব নয়। আমরা গণভোটে সম্মত হয়েছি, তবে সেটি নির্বাচনের দিনেই হওয়া উচিত।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একপেশে সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে তা জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব ভবিষ্যতে জাতীয় জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন

