৭২ বছরে রাকসুর ১৭তম নির্বাচন আজ, তিন দশক পর ভোটের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ক্যাম্পাস
সাড়ে তিন দশক পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭ কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। এতে অংশ নেবেন ২৮ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পাসে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, “প্রার্থী ও সমর্থকরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সবাই দায়িত্ব পালন করলে ভোট স্বচ্ছ থাকবে।”
১৯৯০ সালের পর এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম রাকসু নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এর আগে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে। এরপর রাকসু ও ছাত্র ইউনিয়ন মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৬ বার ভোট হয়েছে—এর মধ্যে স্বাধীনতার পর ছয়বার। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষে।
রাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়া বাকি ২৩টি পদে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দেবেন। পাশাপাশি ১৭টি হল সংসদের ১৫টি করে পদ ও সিনেটের ৫টি ছাত্র প্রতিনিধি পদেও ভোট হবে।
রাকসুর ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।
নির্বাচনে মোট ১০টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দুটি প্যানেল—ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ এবং ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এছাড়া বামপন্থী জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, এবং নারী প্রার্থী তাসিন খানের নেতৃত্বে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে—এটাই বড় আনন্দের বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, “রাকসু থাকলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। দলীয় প্রভাব কমবে, ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরবে।”
রাকসুর ইতিহাসে ভিপি পদে ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রদল পালাক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৮৯-৯০ সালের নির্বাচনে ভিপি ছিলেন ছাত্রদলের রুহুল কবির রিজভী এবং জিএস ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর রাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকরা বলছেন, রাকসু শুধু রাজনীতি নয়, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র। নিয়মিত নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক চর্চা ও সুস্থ ছাত্ররাজনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে বলে তারা আশা করছেন।
মন্তব্য করুন