নেত্রকোণায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নেত্রকোণার কলমাকান্দায় কালাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন-কাম-ফ্লাড শেল্টার নির্মাণে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও অনুমোদিত ডিজাইন লংঘন করে ভবনটির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার ।
এদিকে, অনিয়মের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থসহ সরকারি অর্থ অপচয়ের আশংকা করছেন এলাকাবাসি। ঝুকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুুন করে ভবন নির্মান করাসহ নির্মাণ কাজের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলজিইডি সূত্রে জানা যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন, পিইডিপি-৪ চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায়, জেলার কলমাকান্দা উপজেলা (এলজিইডি) তত্বাবধানে পরিচালিত কালাকোণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন-কাম-ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ করছে। তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণের চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫হাজার ৩ শত ৩৬ টাকা নির্মান ব্যায় ধরা হয়েছে। চুক্তিমূল্যে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১ বছর মেয়াদে মের্সাস ফাইভ ব্রাদার্স স্বত্বাধিকারী আরাধন ও জিল্লুর রহমান নামের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তায়নের কাজ শুরু করেন।
নির্ধারিত সময় পার হবার এক বছর পর নিয়মিত বিরতি দিয়ে ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার বিদ্যালয়ের অনিয়মের ব্যাপারে কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বারংবার তাগাদা দেয়ার পরও ঠিকাদার ও উপজেলা কৌশলী আমাকে ভবন নির্মাণের প্ল্যান-ইষ্টিমিট ও ডিজাইন দেয় নাই। ভবন নির্মাণে পাইলিং করা হয়নি পাইলিং এর টাকা ঠিকাদার ও প্রকৌশলী মিলে ভাগবায়োয়াটা করে খেয়েছে। অনুমোদিত প্ল্যান-ইষ্টিমিট ও ডিজাইনে পাইলিং ভিত্তির কথা বলা থাকলেও শুধুমাত্র মাটির উপরে বেইজ ঢালাই দিয়ে নকশা অনুসরন না করে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের অনেক কাজই আমাকে নাজানিয়ে করা হয়েছে। স্কুল বন্ধের দিনে দুটি ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে শুধু অনিয়ম করার কারনে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে জানানো হলেও তার পক্ষ হতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। বর্তমানে কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।”
চারুলিয়া মাইজ পাড়া গ্রামের ৩নং হোগলা ইউপি ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য কামাল হোসেন (৪৩). ধীতপুর গ্রামের মহব্বত আলী ফকিরের পুত্র লুৎফর জামান ফকিরসহ এলাকাবাসী বলেন দেখেই বোঝা যায় এখানে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে। পাইলিং ছাড়া ভবনটি নির্মান করা হয়েছে তাই এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ভবনটি যে কোনো সময় ভেংঙ্গে পড়তে পারে।
ধীতপুর গ্রামের মৃত সদর আলী ফকিরের পুত্র হারেছ ফকির ও হিরাকান্দা গ্রামের মরহুম মুক্তুল হোসেন আকন্দের পুত্র জালালসহ স্থানীয়রা জানান, বিল, নদী ও জলাশয় থেকে বিল্ডিং নির্মাণে ব্যবহারের অনুপযোগি মাটি বালি উত্তোলন করে নির্মান কাজ করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে চাত্র-ছাত্রীর জন্য দূর্বল ও ঝুকিপূর্ণ স্কুল ঘর তৈরি হচ্ছে এটি বেশি দিন টিকবে না। হাওর এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই পাইলিং করতে হবে। এখানে ভবন নির্মানের ডিজাইন অনুসরণ না করে প্রকৌশলী পাইলিংএর টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, যখন ফাইনাল বিল হয় আমরা কাজ দেখি। তার আগে দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা প্রকৌশলীর তিনি যদি কাজে অনিয়ম করে থাকে আমি বিষয়টি দেখব। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ৬০% কাজ শেষ হলেও কাজের বিল তুলে নিয়েছে ৯০% এখানে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার হতে বিল উত্তোলন করা হয়েছে এ যেনো পুকুর নয় সাগরচুরি।
এখানে যে ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তাতে ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই, এটি করা না হলে ভবনটি স্থায়ী হবে না।
মন্তব্য করুন