জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া আসলে বিরাজনৈতিকীকরণ

রাষ্ট্র সংস্কারের নামে জুলাই সনদ তৈরিতে যেসব প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা চলছে, তা দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের এক প্রক্রিয়া বলেই মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
তিনি বলেন, “রাজনীতি মানে হচ্ছে বিভিন্ন দলের আদর্শ থাকবে, উদ্দেশ্য থাকবে, আর সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আলাদা পথ-পদ্ধতি থাকবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অনেক বিষয়ে একমত হতে চলেছে। যদি এমন হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো তো সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনে পরিণত হবে।”
ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, গণতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও লক্ষ্য ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলগুলো যদি গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে একমত হয়ে যায়, তাহলে বিভিন্ন দল থাকার প্রয়োজনই থাকে না। “এভাবে আমরা প্রকারান্তরে একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকেই ফিরে যাচ্ছি,” মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সব দল যদি ৩০ দফা বিষয়ে একমত হয়, তাহলে রাজনীতি আর রাজনীতি থাকে না—সেটা বিরাজনৈতিকীকরণে পরিণত হয়। বিভিন্ন দল থাকার মানে হলো ভিন্নতা থাকা, যাতে মানুষ নিজেদের পছন্দের আদর্শের দল বেছে নিতে পারে।”
জুলাই ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরের ঘটনাগুলো সেখানে তুলে ধরা হয়েছে—যেখানে অপরাধ, লুটপাটসহ নানা বিষয় উল্লেখ আছে। কিন্তু এসব ইতিহাস কখনো সংবিধান বা আইনের অংশ হতে পারে না। যেমন শেখ হাসিনার সময় পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু জাতির জনক—এসব রাজনৈতিক বাস্তবতা আইন নয়।”
ড. শাহদীন মালিকের ভাষায়, “আমরা না বুঝেই বিরাজনৈতিকীকরণের পথে হাঁটছি। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করার এই প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছায় যুক্ত হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতা ও দৈন্যের প্রকাশ।”
তিনি আরও বলেন, “যদি জুলাই সনদের মতো ঐকমত্যভিত্তিক সংস্কার বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দলগুলো আর নিজেদের আদর্শ নিয়ে কথা বলতে পারবে না। এখন দেখার বিষয়—ঐকমত্য কমিশন আসলে কতটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে এবং জুলাই সনদ কখন বাস্তবায়িত হয়।”
শেষে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমরা যদি মনে করি মই বেয়ে চাঁদে যাব, তাহলে সেই মই তৈরি নিয়েই আলোচনা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।”
সূত্র : ড. শাহদীন মালিক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
মন্তব্য করুন