আসিফ নজরুল
মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সংঘাত ও অপরাধের প্রবণতা দেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে অবস্থানকালে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন—বাংলাদেশিদের, বিশেষ করে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকদের মধ্যে ‘ঘোষণা দিয়ে মারামারির’ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এমন আচরণে দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এবং এর খেসারত দিতে হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ প্রবাসীকে।
তিনি জানান, সৌদি আরবের কিছু এলাকায় কিছু বাংলাদেশি সন্ত্রাসী প্রবাসী শ্রমিকদের বাড়িতে ঢুকে ছিনতাই ও সহিংসতা চালায়। এমনকি ছুরি হামলার মতো ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনা কাল্পনিক নয় বরং বাস্তব, যা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু এধরনের অপরাধের শিকার অনেকেই অভিযোগ করতে ভয় পান, কারণ অভিযোগ উঠলেই পুলিশ অনেক সময় দোষী-নির্দোষ না দেখে সবাইকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
আসিফ নজরুল বলেন, মাত্র কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীর জন্য হাজার হাজার সৎ ও পরিশ্রমী প্রবাসী কর্মী সমস্যায় পড়ছেন। বিদেশিরা ভালো কাজের তুলনায় খারাপ ঘটনার কথাই বেশি মনে রাখে। ফলে পুরো দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
টিকিটের দাম, প্রশাসনিক জটিলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার ভালো কিছু করতে চাইলেও সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির কারণে তা ব্যাহত হয়। সৌদি আরবে সিন্ডিকেট না থাকলেও সেখানে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের ৬-৭ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এসব টাকা আদায় করে একটি চক্র, যারা দেশের তরুণদের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে।
মালয়েশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাস্তবে খুব সীমিত সংখ্যক লোকই সেখানে কাজের সুযোগ পাবে, কিন্তু দেশে গুজব ছড়ানো হয় লাখ লাখ কর্মী যাচ্ছে—এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
প্রবাসে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের দক্ষতা ও ভাষা জ্ঞান না থাকায় অনেককেই অসম্মানজনক পেশায় কাজ করতে হচ্ছে। এতে শুধু প্রবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয় না, দেশের সম্পদও অপচয় হয়।
আসিফ নজরুল বলেন, সম্মানজনক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশে সুযোগ বাড়ানো উচিত। দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে সরকার, বায়রা ও ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা গেলে প্রতি বছর কমপক্ষে দুই লাখ দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠানো সম্ভব, যা লাখো পরিবারের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে অপরাধ নয়, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দিয়েই বিদেশে যেতে হবে। সম্মানজনক প্রবাসী সমাজ গড়াই হতে হবে সবার লক্ষ্য।
মন্তব্য করুন