logo
  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২

ভেনেজুয়েলায় সিআইএ–কে অভিযান চালানোর অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
  ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৬
আল জাজিরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার জানিয়েছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)–কে অনুমোদন দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাঁর প্রশাসন দেশটিতে স্থলভিত্তিক সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়টিও বিবেচনা রেখেছে।

এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার নৌযানগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রাণঘাতী হামলার পর ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বুধবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে সাংবাদিকরা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত সিআইএ অনুমোদন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

এক সাংবাদিক সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কেন সিআইএ–কে ভেনেজুয়েলায় পাঠানোর অনুমতি দিলেন?” ট্রাম্প উত্তরে বলেন, “দুটি কারণে। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা সরকার) তাদের কারাগারগুলো খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশটি মাদক পাচারে জড়িত।” তিনি আরও বলেন, “অনেক মাদক ভেনেজুয়েলা থেকে সমুদ্রপথে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। কিন্তু আমরা তা থামাব—শুধু সমুদ্রেই নয়, স্থলপথেও।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে রয়েছেন। দুই দেশই সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান উপকূলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে।

ভেনেজুয়েলার সরকার ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিআইএ–এর অভিযান অনুমোদনের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এক বিবৃতিতে মাদুরো প্রশাসন জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের বৈধতা সৃষ্টি ও দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, “সিআইএ কি মাদুরোকে অপসারণের ক্ষমতা পেয়েছে?” উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে ঠিক হবে না। এটা করা বোকামি হবে। তবে বলা যায়, ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি এখন গরম।”

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প “যুদ্ধকালীন ক্ষমতা” প্রয়োগের দাবি করেছেন, ১৭৯৮ সালের Alien Enemies Act–এর মতো পুরোনো আইন ব্যবহার করে। তিনি অভিযোগ করেন, ভেনেজুয়েলা থেকে অপরাধী ও অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে, যা এক ধরনের “আক্রমণ”।

তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগের কোনো সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ভেনেজুয়েলার অপরাধী সংগঠন যেমন Tren de Aragua–এর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্কের প্রমাণ নেই।

ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদনে সেপ্টেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলার উপকূলে অন্তত পাঁচটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে দেখা যায়, এক নৌকা মিসাইল হামলায় আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

বহু আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কারণ মাদক পাচারকারীরা যুদ্ধের “সশস্ত্র যোদ্ধা” হিসেবে বিবেচিত নয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি যে নৌযানগুলো আসলেই মাদক বহন করছিল।

ট্রাম্প অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, এসব হামলা যুক্তরাষ্ট্রে মাদকাসক্তির কারণে প্রাণহানি ঠেকাতে সহায়তা করবে। তাঁর ভাষায়, “যখন তারা মাদকে ভর্তি থাকে, তখন তারা বৈধ লক্ষ্যবস্তু।”

তিনি দাবি করেন, সমুদ্রপথে মাদক পাচার প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং এবার স্থলপথেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “আমরা সমুদ্রপথ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন স্থলপথের দিকে নজর দিচ্ছি,” বলেন ট্রাম্প।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেনেজুয়েলায় সিআইএ–এর অভিযানের অনুমোদন ও সামরিক হামলার প্রস্তুতি ট্রাম্প প্রশাসনের “গোপন সামরিক নীতি”র অংশ, যা বিদেশে প্রাণঘাতী পদক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করছে—যদিও প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে শান্তির কথা বলছেন।

তথ্যসূত্র- আল জাজিরা

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি ভারত
সীমান্তে তীব্র লড়াই ও বিমান হামলার পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সরকারি কর্মী ছাঁটাই পরিকল্পনায় আদালতের স্থগিতাদেশ
গাজায় ত্রান সহায়তা সীমিত করলো ইসরায়েল; ৪ বন্দীর মৃতদেহ হস্তান্তর করলো হামাস
12