জুলাই সনদের খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: বামজোট

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর সংশোধিত খসড়া না পাওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না—এ ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত চার দল। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, সনদের খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সর্বসম্মত না হওয়া অনেক প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের চার দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—বলেন, এই অবস্থায় সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল হবে।
জোটের নেতারা জানান, সনদের প্রথম অংশে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি, যদিও বারবার সংশোধনী দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানে স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অস্তিত্বের মূল ভিত্তিকে আঘাত করে।
তাদের মতে, সংবিধানের চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ—বদলে দেওয়ার বা উপেক্ষা করার কোনো উদ্যোগ জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমান। সনদের অঙ্গীকারনামায় ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’—এই ধারা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “যেসব বিষয়ে সর্বসম্মতি হয়নি, সেগুলো সনদে যুক্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ভিন্নমতসহ এই সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, “সংবিধানের দার্শনিক অংশে পরিবর্তন মানে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অস্বীকার করা। কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্টতা রেখেছে।”
বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন জানান, তারা আগামীকাল বিকেল ৩টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সংশোধিত সংস্করণের অপেক্ষায় থাকবেন। “যদি সর্বসম্মত প্রস্তাব যুক্ত হয়, আমরা শেষ মুহূর্তেও স্বাক্ষর করতে রাজি,” বলেন তিনি।
বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, “সংবিধানের চার মূলনীতি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। কিছু পক্ষ এগুলো বাদ দিয়ে সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান হিসেবে দেখাতে চায়, যা আমরা মেনে নিতে পারি না।”
বাম জোটের নেতাদের দাবি, ঐকমত্য কমিশন সচেতনভাবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা তাদের দলের নীতির পরিপন্থী, ফলে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে। তারা বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চাই, কিন্তু কোনো অগণতান্ত্রিক সনদে স্বাক্ষর করব না।”
মন্তব্য করুন