logo
  • মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

বিশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির দাবিতে হামাসের চাপ

অনলাইন ডেস্ক
  ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৩
বিবিসি

হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলকে বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় গাজা থেকে বন্দি মুক্তি এবং জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

ইসরায়েলি বিচার মন্ত্রণালয় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির নাম প্রকাশ করেছে, তবে তালিকা থেকে সাতজন প্রভাবশালী নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মারওয়ান বারঘুতি ও আহমাদ সা’দাত। এরা ইসরায়েলে আলাদা আলাদা হামলার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ১২টার (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) আগে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই চুক্তিটি প্রস্তাব করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনায় বাদ পড়া বন্দিদের বিষয়ে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওই বিশিষ্ট বন্দিদের মুক্তি দেবে না।

এই বিষয়টি বন্দি বিনিময়ের সময়সূচি বা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গঠিত এই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি ফেরত চুক্তির প্রথম ধাপেই মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

পূর্ববর্তী বন্দি বিনিময়ে হামাস কখনো কখনো জনসমক্ষে জিম্মিদের প্রদর্শন করেছিল, যা ইসরায়েল ও পশ্চিমা মিত্রদের ক্ষুব্ধ করেছিল। এবার কীভাবে মুক্তি কার্যকর হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

জিম্মি থাকা নিহত ব্যক্তিদের মরদেহও ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২৬ জন জিম্মি মারা গেছেন, এবং দুজনের ভাগ্য অজানা।

চুক্তির আওতায় ইসরায়েল আজীবন কারাদণ্ড পাওয়া ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি এবং গাজা থেকে আটক ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেবে। হামাসের প্রস্তাবিত বন্দি তালিকায় বারঘুতি ও সা’দাতের নাম ছিল।

মারওয়ান বারঘুতি ২০০৪ সালে পাঁচটি খুনের পরিকল্পনার দায়ে পাঁচটি যাবজ্জীবন ও অতিরিক্ত ৪০ বছরের সাজা পেয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, তিনি এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি নেতা। নির্বাচনে তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও হামাস নেতাদের চেয়ে বেশি ভোট পেতেন।

বারঘুতি এখনো ফাতাহ দলের একজন শীর্ষ নেতা, যারা পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা আহমাদ সা’দাত ২০০৮ সালে ৩০ বছরের সাজা পান। তাঁকে “অবৈধ সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান” হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে ২০০১ সালে এক ইসরায়েলি মন্ত্রীর হত্যাকাণ্ড ঘটে।

মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামিক জিহাদের নেতা ইয়ারদ আবু আল-রুব, যিনি ২০০০ সালের শুরুতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। এসব হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ইসরায়েলি বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁকে গাজায় পাঠানো হতে পারে বা বিদেশে নির্বাসিত করা হবে।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, হামাস আরও কিছু বন্দির মুক্তি দাবি করছে। এরা আগে গিলাদ শালিত বিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু গত ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর আবার গ্রেপ্তার হন। হামাসের দাবি, আগের বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্তদের এবার নতুন তালিকায় গণনা করা উচিত নয়।

ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা এখন হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন। প্রথম ধাপে শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, এবং ইসরায়েলি সেনারা আংশিকভাবে গাজা থেকে সরে যায়। প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক এখন গাজায় প্রবেশ করছে। পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

দক্ষিণ গাজা থেকে শত সহস্র মানুষ গাজা সিটিতে ফিরে এসেছে, যা সাম্প্রতিক আক্রমণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, তারা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করছে, অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ।

গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। এরপর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে ৬৭,৬৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তথ্যসূত্র- বিবিসি

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
“রাশিয়া কি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের দিকে আসতে দেখতে চায়? আমার মনে হয় না।”
‘ঐতিহাসিক দিন’ উপলক্ষ্যে ইসরায়েলের পথে ট্রাম্প
গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির নিশ্চয়তা পেল হামাস, যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলের অনুমোদন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়াকড়ি আরোপ করল তালেবান সরকার
12