ঢাকা দক্ষিণে ডেঙ্গু আতঙ্ক, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৩৪ মৃত্যু

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারী হয়ে উঠেছে, মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এ মাসে আরও ভয়াবহ হতে পারে এই পরিস্থিতি।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকাতে বিশাল পার্থক্য দেখা গেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মৃত্যুর সংখ্যা ১০৫, আর উত্তর সিটিতে ২৯ জন মারা গেছেন। তবে দুই সিটির মধ্যে তেমন কোনো সমন্বয় বা উদ্যোগের অভাব থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা আরো খারাপ হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ডিএনসিসিতে (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬,০৪২ জন, এবং ডিএসসিসিতে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) আক্রান্ত হয়েছেন ৭,৭৭৬ জন। মৃত্যুর পরিসংখ্যানও উল্লিখিত সিটি দুইটিতে বিভক্ত: উত্তরে ২৯ জন এবং দক্ষিণে ১০৫ জন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণে নতুন করে আরও ২৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরে ১৪১ জন এবং দক্ষিণে ১১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। সোমবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে উত্তরে একজন এবং দক্ষিণে অন্য একজন মারা গেছেন। বর্তমানে দুই সিটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ জন।
মশা বিশেষজ্ঞ ড. কবিরুল বাশার বলেন, “যতই কীটনাশক ছিটানো হোক, যদি এই শহরের কাঠামো ঠিক না করা যায়, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমবে না।” তিনি বলেন, “এ বছর নভেম্বরে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। শীতেও ডেঙ্গু থাকবে, যা অন্য বছরগুলোতে এ সময় না থাকলেও এবার থাকবে।”
দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে গত ১৩ বছরে খরচ হয়েছে ১,৩৫৪ কোটি টাকা। তবে কার্যকরীভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটির জন্য ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও উত্তর সিটিতে বরাদ্দ বেড়ে ১১০ কোটি টাকা হয়েছে।
মহানগরী কিশোরগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “যতই মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হোক, যদি শহরের ড্রেন, নর্দমা ও জলাশয় পরিষ্কার না করা যায়, মশার উপদ্রব থামানো সম্ভব নয়।” গত কয়েক মাসে ভারি বৃষ্টির কারণে মশার বংশবিস্তার বেড়েছে।
ঢাকা শহরের বাসিন্দারা এবার বৃষ্টি ও মশার প্রকোপ নিয়ে উদ্বিগ্ন। নাগরিকদের অভিযোগ, ঢাকা শহরে বিশাল অঙ্কের বাজেট সত্ত্বেও মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে যথাযথ ফল আসছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার জন্মস্থান পরিষ্কার না করলে কোনো মশকনিধন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না।
উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ফগার, স্প্রে মেশিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছে, কিন্তু দক্ষিণ সিটিতে তার তেমন কার্যকরী সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন কর্মীদের মতে, জলাশয়ের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কারে গতি কম হওয়া পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে।
শহরবাসী ও বিশেষজ্ঞরা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছেন, যাতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থামানো যায় এবং নগরবাসী শ্বাসফিরে বাঁচতে পারে।
মন্তব্য করুন