বিএনপির কাছে ২০ আসন ও মন্ত্রিসভায় হিস্যা চায় এনসিপি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বিএনপির সঙ্গে অন্তত ২০টি আসনে সমঝোতা চায় এবং ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রিসভায় অংশীদারিত্বের দাবিও তুলেছে।
উভয় দলের সূত্রে জানা গেছে, এসব আলোচনা এখনো অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে থাকলেও এনসিপি বিএনপির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। একই সঙ্গে এনসিপির কিছু নেতা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছেন।
বিএনপির এক সূত্র জানায়, এনসিপির নেতারা শুধু আসন নয়, নিজেদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিয়েও নিশ্চয়তা চান। তারা প্রস্তাব করেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এনসিপি থেকে অন্তত তিনজনকে মন্ত্রী করা হোক। যদিও বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
অন্যদিকে বিএনপি চায় না এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট গঠন করুক। এনসিপির নীতিনির্ধারক মহলও নিজেদের “ডানপন্থী” হিসেবে পরিচিত করতে অনাগ্রহী এবং বরং মধ্যপন্থী অবস্থান বজায় রাখতে চায়।
গতকাল (মঙ্গলবার) এনসিপি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। মুখ্য সমন্বয়ক করা হয়েছে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে এবং সেক্রেটারি হয়েছেন তাসনিম জারা। এই কমিটি সার্বিক প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই, প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকবে।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮ বা চাঁদপুর-৫, তাসনিম জারা ঢাকা-৯, এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
এই আসনগুলোর বেশিরভাগে বিএনপি ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তবে ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১৮ আসন ফাঁকা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনগুলো এনসিপির প্রার্থীদের জন্য রাখা হতে পারে।
এনসিপির সূত্রে জানা গেছে, দলটি ঢাকায় চারটি সহ মোট ২০টি আসনে সমঝোতা চায়। দুই দলের মধ্যে বোঝাপড়া হলে বিএনপি কিছু আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহারও করতে পারে।
একই সঙ্গে এনসিপির আরও অর্ধশতাধিক নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মনিরা শারমিন (নওগাঁ-৫), সারোয়ার তুষার (নরসিংদী-২), আতিক মুজাহিদ (কুড়িগ্রাম-২), আবদুল্লাহ আল আমিন (নারায়ণগঞ্জ-৪), এস এম সাইফ মোস্তাফিজ (সিরাজগঞ্জ-৬), আশরাফ উদ্দীন মাহাদী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) এবং জয়নাল আবেদীন শিশির (কুমিল্লা-১০)।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। বিএনপি যদি সহযোগিতা করে, তবে তারা যথাক্রমে লক্ষ্মীপুর-১ ও ঢাকা-১০ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
যদিও বিএনপির সঙ্গে জোট আলোচনায় এনসিপি সক্রিয়, তবুও তারা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, চার-পাঁচটি আসনে দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে, যার মধ্যে নোয়াখালী-৬ ও কুড়িগ্রাম-২-এ জামায়াতের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, “এই মুহূর্তে এনসিপি কোনো জোট নিয়ে ভাবছে না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছি। এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে বোঝাপড়া হলে বিরোধী জোটের নির্বাচনী ভারসাম্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
মন্তব্য করুন





