মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আদেশ জারির ক্ষমতা রাখে না
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা, কমিশনের স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আদেশ জারির ক্ষমতা রাখে না। তাঁর মতে, সংবিধান অনুযায়ী কোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া আইন হিসেবে কার্যকর হতে পারে না। এই অবস্থায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নামে সরকার যদি কোনো আদেশ বা প্রক্রিয়া শুরু করে, তা সংবিধানের পরিপন্থী হবে।
মির্জা ফখরুল জানান, নির্বাচনের দিন ছাড়া অন্য সময় গণভোট আয়োজন করা অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। তাঁর ভাষায়, “এটি অবাস্তব, ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ—যা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে চলা সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ছিল “অর্থহীন ও প্রহসনমূলক”। বিএনপির দাবি, এই আলোচনার মাধ্যমে কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়নি, বরং এটি ছিল সরকারের একতরফা প্রক্রিয়া।
ফখরুলের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাঁর মতে, ভিন্নমত বাদ দিয়ে ঐকমত্যের নামে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে “অন্যায়ের বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা”।
বিএনপি দাবি করেছে, ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যখন জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়, তখন দলটির কাছে সনদের চূড়ান্ত কপি উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে তারা জানতেই পারেনি চূড়ান্ত নথিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ফখরুলের মতে, ২৭০ দিন পর প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। তিনি বলেন, “সংবিধান পরিবর্তনের একমাত্র বৈধ পথ হলো সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত।”
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ঐকমত্যের মাধ্যমে যেসব প্রস্তাবে একমত হওয়া হয়েছিল, সেগুলোর কয়েকটি ধারা বিএনপির অজান্তে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও সংবিধানবিরোধী হিসেবে দেখছে। তাঁর মন্তব্যে যেমন সরকারের প্রতি অনাস্থার সুর রয়েছে, তেমনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিও পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধু কমিশনের প্রস্তাব নিয়েই নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘিরেও দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করবে।
মন্তব্য করুন





