গাজায় ক্ষুধা ‘দুর্ভিক্ষ’ নয়, বরং পরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল

গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক বিপর্যয়কে সাধারণ দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখার বিপরীতে, এটিকে একটি সুপরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন ফিলিস্তিনি গবেষক, পরিবেশ ও কৃষি বিশেষজ্ঞ ফুয়াদ আবু সাইফ।
এক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, “গাজায় যে দুর্ভিক্ষ চলছে, তা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কিংবা ব্যর্থ রাষ্ট্রের ফলও নয়। এটি একটি চলমান অপরাধ—যা বিশ্বের চোখের সামনেই ঘটছে।”
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য উদ্ধৃত করে আবু সাইফ বলেন, গাজার ৯৫ শতাংশের বেশি কৃষিজমি ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে বা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে খাদ্য উৎপাদনের স্বনির্ভরতা, যা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয় নয়, বরং একটি জাতিকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা।
তার ভাষায়, ইসরায়েল এখন আর কেবল সামরিক আক্রমণে সীমাবদ্ধ নেই। বরং তারা গাজার খাদ্য, পানি ও কৃষিজ উৎপাদনের উপকরণগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। শস্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া, পানির পরিকাঠামোয় হামলা, কৃষক ও জেলেদের ওপর আগ্রাসন—এসবই ইসরায়েলের বৃহৎ একটি কৌশলের অংশ, যার উদ্দেশ্য গাজার সমাজ ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে কটাক্ষ করে সাইফ বলেন, নির্লিপ্ততা ও অস্পষ্ট কূটনৈতিক বিবৃতি ইসরায়েলের এমন নীতিকে উৎসাহিত করেছে। তার অভিযোগ, আন্তর্জাতিক নীরবতায় ক্ষুধা এখন বৈধ যুদ্ধকৌশলে পরিণত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যখন শিশু খাদ্য, ময়দা বা বোতলজাত পানি সরবরাহকে রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ করা হয়, তখন এটি আর কেবল মানবিক সংকট থাকে না। তখন এটি হয়ে ওঠে নিষ্ঠুর রাজনৈতিক চাঁপ সৃষ্টির একটি অস্ত্র।”
ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে ‘নিয়েলেনি গ্লোবাল ফোরাম’-এর তৃতীয় সম্মেলন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক, জেলে ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতারা অংশ নেবেন।
সাইফ বলেন, “আমরা এমন একটি বিশ্ব চাই, যেখানে খাদ্য কখনোই যুদ্ধের অস্ত্র হবে না।”
তিনি বলেন, “ইতিহাস গাজার ঘটনা মনে রাখবে—মনে রাখবে, কে মুখ খুলেছিল আর কে চুপ ছিল। বিচার হয়তো বিলম্বিত হবে, কিন্তু বিচার হবেই।”
মন্তব্য করুন