ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্তের পথে, বাংলাদেশে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ৫০% থেকে কমে প্রায় ১৫-১৬% হতে পারে। এই হার বর্তমানে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য ২০% শুল্কের চেয়েও কম।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, চুক্তিটি চলতি মাসের শেষের দিকে আসন্ন আসিয়ান সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে।
বাংলাদেশ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫% থেকে ২০% শুল্কে নামাতে সক্ষম হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা আরও কমিয়ে ১৫% পর্যন্ত আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও ভারতের আগে এই লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা বর্তমানে খুবই ক্ষীণ।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা মনে করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত ও বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে শুল্কের ব্যবধান ৫% এর মধ্যে সীমিত থাকে, তাহলে স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
তাঁদের মতে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়লে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে তারা সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এই শুল্ক ব্যবধান টিকে থাকলে ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ খাতে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মিন্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই চুক্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বা হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা মনে করেন, সম্ভাব্য এই শুল্ক বৈষম্য স্বল্পমেয়াদে বড় কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু দ্যা ডেইলি স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “৫ শতাংশের ব্যবধান কিছুটা সমস্যা তৈরি করবে বটে, তবে এটা বড় কোনো বিষয় নয়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, পোশাক খাতে ভারত বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, কারণ তাদের পণ্যের ধরণ ভিন্ন। “নিট পোশাকে কিছু প্রতিযোগিতা থাকলেও তাঁরা ওভেন পোশাকে অনেক পিছিয়ে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়ায়, তাহলে ইউরোপীয় বাজার আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা ইউরোপে বেশি জোর দিচ্ছিলেন। শুল্ক কমলে তারা আবার আমেরিকামুখী হতে পারেন, ফলে ইউরোপে আমাদের জন্য সুযোগ বাড়বে।”
একই মত প্রকাশ করেন শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, “ভারতের জন্য ১৫% শুল্কহার স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য তেমন চ্যালেঞ্জ নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির একটি বড় অংশ হলো হোম টেক্সটাইল, যেখানে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ব্যবধান দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারত তাদের লিংকেজ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াবে, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার অবস্থান দুর্বল করে দিতে পারে।”
কিছু প্রভাব থাকলেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির কারণে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় কোনো বিপর্যয় ঘটবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেণ বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ।
মন্তব্য করুন