‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ পুনর্বিবেচনা করছে সরকার : আসিফ মাহমুদ

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’, ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও অসন্তোষ। এ বিষয়ে ব্যাপক আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এখন দিবসগুলোর বিষয় পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “নানান মহলের আপত্তির বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দিবসসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”
এনসিপির কড়া প্রতিক্রিয়া
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত বুধবার জারি করা পরিপত্রে ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট এবং ১৬ জুলাই—এই তিনটি দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সেগুলো প্রতি বছর যথাযথভাবে উদ্যাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র শীর্ষ নেতারা।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন,
> “নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট নয়। সাধারণ ছাত্র–জনতার এই অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লিখেছেন,
> “৮ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি, বরং ওই দিন থেকেই দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
তার মতে, ৫ আগস্টকেই ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন,
> “নতুন বাংলাদেশ দিবস সেদিনই হবে, যেদিন ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশিত হবে এবং মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ গৃহীত হবে।”
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উদ্যাপনযোগ্য দিবসগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বলা হচ্ছে, দিবসের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ইতিহাস, আন্দোলনের তাৎপর্য ও সর্বসম্মত জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির মতো একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের এমন অবস্থান দিবস নির্ধারণের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আর সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবের ‘পুনর্বিবেচনার’ বক্তব্য সেই বিতর্কেরই একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিক্রিয়া।
সরকার ঘোষিত নতুন তিনটি দিবসের মধ্যে ৮ আগস্টকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আপত্তি উঠেছে। এনসিপি’র দাবি—নতুন বাংলাদেশের প্রকৃত সূচনা ৫ আগস্টেই। আপত্তি ও জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করছে বলে নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। এখন দেখার বিষয়, ঘোষিত দিবসগুলো চূড়ান্তভাবে কীভাবে পুনর্গঠন বা সংশোধিত হয়।
মন্তব্য করুন