বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উমামা ফাতেমার বিদায়

দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা নেত্রী উমামা ফাতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজের বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার (২৮ জুন) দিবাগত রাতে তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিশ্লেষণধর্মী স্ট্যাটাসে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সংকট, স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিজের মানসিক যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
উমামা জানান, এনসিপি গঠনের পরও অসমাপ্ত কাজের দায়বদ্ধতা থেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে কাজ করে গেছেন। তবে নানা চাপ, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ‘স্মিয়ার ক্যাম্পেইন’-এর শিকার হয়ে তাকে ধীরে ধীরে সরে যেতে হয়েছে। তার ভাষায়, “যে মানুষগুলার সাথে পাশে দাঁড়ায় মিটিং করেছি, মিছিল করেছি, তারাই পরিকল্পিতভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।”
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্ব ও কমিটি গঠনে গোষ্ঠীগত স্বার্থ, লেজুড়বৃত্তি, প্রহসন ও স্বেচ্ছাচারিতার জায়গা তৈরি হয়েছে। দায়িত্বশীলদের কাছে বারবার আপত্তি জানালেও কোনো প্রতিকার হয়নি, বরং সামাজিকভাবে তাকে হেয় করার নানা চেষ্টা চালানো হয়েছে।
স্ট্যাটাসে তিনি অভিযোগ করেন, প্ল্যাটফর্মের ফেসবুক পেইজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক চাপে এবং “সুপ্রীম অথোরিটি” বলে পরিচিত কিছু গোষ্ঠীর কাছে পদ-পদবীর দরকষাকষির চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। উমামার ভাষায়, “আমি তো দেশ সংস্কার করতে আসছিলাম, কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে না।”
উমামা জানান, কাউন্সিল ভোটের দিন শেষ মুহূর্তে তিনি ভোট দিলেও পরে বুঝতে পারেন নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ব্যক্তিদের পর্যন্ত সদস্য বানানো হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে তিনি ভোট প্রত্যাহার ও প্ল্যাটফর্ম থেকে পূর্ণ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
এই দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি প্ল্যাটফর্মের অতীত কর্মকাণ্ডের প্রশংসাও করেছেন, বলেছেন “অনেক ভালো ছেলে-মেয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে,” কিন্তু সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্যে তাদেরও জায়গা হয়নি। তিনি বলেন, “আমি রুহের ভেতর থেকে বদদোয়া দিচ্ছি এই মোনাফেকদের।"
সবশেষে উমামা ফাতেমা জানান, তিনি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছেন এবং আগামীর পথে এগিয়ে যেতে চান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তার পরামর্শ— “পড়ার টেবিলে মনোযোগ দিন, কাজে মনোযোগ দিন।” তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
মন্তব্য করুন