অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
“শেখ মুজিবের দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে তাঁর কন্যার হাতে”

“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যু হয়েছিল সামরিক বাহিনীর হাতে। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটেছে কন্যা শেখ হাসিনার দ্বারা”—এমন মন্তব্য করেছেন লেখক, সমাজচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সোমবার (২৩ জুন) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক একক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তাঁর ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকা’ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন তিনি।
বক্তব্যে তিনি বলেন, “শেখ মুজিবকে সামরিক বাহিনীর একাংশ হত্যা করেছিল। সেটি ছিল তাঁর প্রথম মৃত্যু। আর দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ভাবমূর্তির। এই ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছেন তাঁরই কন্যা, যিনি তাঁকে অপ্রতিম উচ্চতায় তুলেছিলেন।”
আলোচনায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “যে জাতীয়তাবাদী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা যুদ্ধ চলাকালীন ভেতর থেকে যুদ্ধ করেনি। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর উপদেষ্টা পাকিস্তানে বন্দি, অন্যরা ভারতে। নেতারা অদৃশ্য ছিলেন। ফলে, সাধারণ মানুষই যুদ্ধ করেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “রাজাকারদের তালিকা না করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে—এটাই ছিল বড় ভুল। এর মধ্য দিয়ে মূল যুদ্ধের চেতনা চাপা পড়েছে।”
ভারতের ভূমিকাও আলোচনায় আসে তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, “ভারত মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে ঠিকই, কিন্তু তা স্বার্থবিরোধী ছিল না। পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ, দুই বাংলা এক হওয়ার শঙ্কা, এসব কারণে তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে।”
একাত্তরের যুদ্ধকে তিনি ‘সবচেয়ে গৌরবময় কিন্তু একইসঙ্গে দুঃখজনক অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেন। বলেন, “পলাশীর পর ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় ট্র্যাজেডি। পাকিস্তান ভেঙেছে কারণ এটি সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত জাতির কৃত্রিম সংহতি ছিল।”
বক্তৃতার শেষ দিকে অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, “আমরা অনেক ধরনের বিপ্লব দেখেছি, কিন্তু এখনো দেখিনি ‘সামাজিক বিপ্লব’। গণহত্যা চলছে নানা রূপে—পরিবেশ ধ্বংস, মাদক, অস্ত্রের বিস্তার দিয়ে। এই পরিস্থিতি রুখতে হলে ব্যক্তিমালিকানার অবসান ঘটিয়ে সমাজিক মালিকানার পথে যেতে হবে।”
অনুষ্ঠানে কবি সাজ্জাদ শরিফ, রাজেকুজ্জামান রতন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক আজফার হোসেন, শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “৯০ বছর বয়সেও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের পথ দেখান, আজকের মতো তীব্র রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাঁর মতো চিন্তক আরো প্রয়োজন।”
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই এ দেশে বারবার বিপ্লব আসে, বারবার মানুষ জেগে ওঠে।”
মন্তব্য করুন