ইউক্রেনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতভর চলা এই আকাশ হামলায় রাশিয়া ব্যবহার করেছে ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী একে ‘এখন পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা’ বলে উল্লেখ করেছে। খবর শাফাক নিউজের।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সূত্র জানায়, হামলায় ইরানীয় তৈরি শাহেদ ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ২৯৬টি ড্রোন ও সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ারের মাধ্যমে আরও ৪১৫টি ড্রোন নিখোঁজ হয়ে যায় বলে জানানো হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটি আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা। এই হামলা প্রমাণ করে, আমাদের আরও শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা দরকার। সেই সঙ্গে রাশিয়ার তেল রপ্তানি ও যুদ্ধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জরুরি।”
তিনি জানান, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল লুতস্ক শহর। পাশাপাশি কিয়েভ, খারকিভ, দিনিপ্রো, মাইকোলাইভ ও সুমি অঞ্চলেও হামলা চালানো হয়। কিয়েভ অঞ্চলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনের ছোড়া ৮৬টি ড্রোন তারা প্রতিহত করেছে। এসব ড্রোন ছয়টি অঞ্চলে হামলার আগেই ধ্বংস করা হয়। মস্কোর আকাশে চারটি ড্রোন আটকানো হয় বলে জানানো হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে শেরেমেতইয়েভো ও কালুগা বিমানবন্দরের ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। হামলায় একটি হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইউক্রেন এখনও এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই ভয়াবহ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য নতুন সামরিক সহায়তা ও বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দেন। পাশাপাশি রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত দেন তিনি। ট্রাম্পের বিশেষ দূত এই সপ্তাহে রোমে একটি ইউক্রেনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুন মাসেই রাশিয়া ৫ হাজার ৪০০টি ড্রোন ও ২৩৯টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে—যা এই যুদ্ধের নতুন রেকর্ড। পশ্চিমা সহায়তায় ইউক্রেন এখন নিজস্ব ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, রাশিয়া শিগগিরই এক রাতে এক হাজারের বেশি ড্রোন হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে—যা যুদ্ধের ধারাকেই আরও ভয়াবহ করে তুলবে।
মন্তব্য করুন