অরক্ষিত তিস্তা বাঁধে আতঙ্ক
বর্ষার আগেই ভাঙনের আশঙ্কা, সংস্কার চলছে ধীর গতিতে

প্রতিবছরই বর্ষা এলেই উত্তরের বিস্তীর্ণ জনপদে ত্রাস হয়ে ফিরে আসে তিস্তা নদী। দুই পাড় প্লাবিত করে বন্যা আর ভাঙন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিজমি, নদীগর্ভে বিলীন হয় ঘরবাড়ি। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার আশঙ্কা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তিস্তা নদীর অন্তত ৪৫ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও ১০টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পয়েন্ট এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর বর্ষার আর বেশি দিন নেই।
তিস্তা নদী নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর তীর রক্ষায় গড়ে তোলা বাঁধের বড় একটি অংশ বর্তমানে ভাঙনের মুখে। নদীর ভাঙনে শঙ্কিত তিস্তা পাড়ের মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া থেকে নোহালী পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ডানতীর বাঁধের উপরেই প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। বাঁধের কিছু অংশে মাটি কেটে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে, ফলে ওইসব অংশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, বাঁধের বেশ কিছু অংশ নীলফামারীর জলঢাকার শৌলমারী থেকে শুরু করে রংপুরের কাউনিয়ার নীচপাড়া পর্যন্ত চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। একাধিকবার উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজ ও সোবহান বলেন, “গত দুই বছরে বন্যায় যেসব স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত উপ-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয় জলঢাকা থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধ। এরপর ২০১৯ সালে সর্বশেষ একবার ১২৬ কোটি টাকার প্রকল্পে বাঁধের সংস্কার করা হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাঁধের বিভিন্ন অংশ আবারও দুর্বল হয়ে পড়েছে। একইভাবে বাঁমতীর বাঁধের ১২০ কিলোমিটার অংশও বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবিব বলেন, “তিস্তার ২০ কিলোমিটার এলাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।”
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সংস্কারের কাজ ধীরগতির হওয়ায় বর্ষার আগেই কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হলে আগাম ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জলঢাকার লক্ষিটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, “দ্রুত সংস্কার না হলে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি লাখো মানুষের জীবনের নিরাপত্তার সুরক্ষা দেয়াল। বর্ষা আসার আগেই জরুরি সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে আবারও নদীর রোষানলে পড়বে উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতির দায় এড়ানো কঠিন হবে।
মন্তব্য করুন