এপ্রিলেই নির্বাচিত সরকার, তারপর আমরা চুপচাপ সরে যাব

আগামী এপ্রিলের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচিত সরকার পাবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার নিরবে সরে যাবে—ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের মানুষ এখনো সরকারকে ‘শত্রু’ হিসেবেই দেখে।
১২ জুন প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে হলে দুর্নীতিকে মূল থেকে সমূলে নির্মূল করতে হবে। সরকারি প্রশাসনের সর্বস্তরে এবং গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এই সংস্কার ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি জানান, গত বছরের জুলাইয়ে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আসেন তিনি। সেই থেকে তার নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ চলছে। ড. ইউনূস চান এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে, যেখানে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং সমতা থাকবে।
ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকেই যে গণবিক্ষোভের সূত্রপাত, তার পেছনে ছিল জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, তরুণদের হতাশা এবং কর্মসংস্থানের অভাব। ড. ইউনূস বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছিল, এবং ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়েছিল দলীয় দুর্নীতির চাপে।”
তিনি জানান, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও জনকল্যাণমূলক খাতে সংস্কার আনতে কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন তিনি। জুলাইয়ের আগে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য রয়েছে, যা আগামী নির্বাচন আয়োজনের ভিত্তি গড়বে।
ড. ইউনূস বলেন, এই সংস্কারগুলো শুধু সামান্য উন্নয়ন নয়, বরং গোটা রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের রূপরেখা। তার ভাষায়, “এরপর আমরা গর্ব করে বলতে পারব—একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে।”
তবে সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য আনা সহজ হবে না বলেও স্বীকার করেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এবং তারা দ্রুত নির্বাচন চায়। তারা প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদসীমা নিয়েও আপত্তি তুলছে।
তবুও ড. ইউনূস আশাবাদী। তিনি বলেন, “বর্তমানে যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা অতীতের বাংলাদেশে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলো এখন মুখোমুখি বসছে, মতৈক্যের পথ খুঁজছে।”
ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নয়ন খাতগুলোতে কাজ করতে চান। তিনি চান, মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থাকে আরও আনুষ্ঠানিক ও সম্প্রসারিত করা হোক। তার মতে, “মাইক্রোক্রেডিট দরিদ্রদের হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে” —এই প্রচারণা ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বরং এটি দরিদ্র মানুষকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করে।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাকে আক্রমণ করত, এখন সবাই করে। এটা স্বাভাবিক। কারণ আমি এখন ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্বে আছি। কিন্তু এপ্রিলের পর আমি সরে দাঁড়াব। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে, আর আমরা চুপচাপ চলে যাব।”
মন্তব্য করুন