তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার বাড়ি গুঁড়িয়ে, প্রাণে বাঁচলেন তিনি

তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার বাড়ি গুঁড়িয়ে, নিরাপত্তাহীনতায় ৪০০ বাংলাদেশি
তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার বাসভবন গুঁড়িয়ে গেছে। হামলার সময় তিনি বাড়িতে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার।
ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার (১৬ জুন) ইসরায়েলের চালানো হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের আবাসন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিস্ফোরণে ‘জর্ডান’ নামে পরিচিত তেহরানের তিন নম্বর জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, “আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।” তবে হামলার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না, ফলে প্রাণে বেঁচে যান।
সেই এলাকার আশপাশে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। ইসরায়েল হামলার আগে সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলায় প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে কম হলেও বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে প্রচুর।
ওয়ালিদ ইসলাম জানান, “আমাদের আশপাশে এখন আর কিছুই নেই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশের এলাকা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
তেহরানের পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানকার মিশন কর্মকর্তা ও নাগরিকদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে দূতাবাস কমপ্লেক্স থেকে সরিয়ে তেহরানের অন্যত্র রাখা হয়েছে কর্মকর্তাদের। বর্তমানে তাঁদের তেহরানের বাইরে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, “আমরা তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যাঁরা তেহরানে আছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
তিনি আরও জানান, তেহরানে অবস্থানরত চার শতাধিক বাংলাদেশি আপাতত অক্ষত রয়েছেন, তবে অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় তেহরান প্রতিনিয়ত কাঁপছে। শহরের রাস্তায় দীর্ঘ যানজট, পেট্রোলপাম্পে তেলের সংকট, দলে দলে শহর ছাড়ছে মানুষ। এই অবস্থায় বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন বহু বাংলাদেশি নাগরিক।
ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, “অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার অবস্থা ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান।”
শুধু তেহরান নয়, বন্দর আব্বাসসহ ইরানের অন্য শহর থেকেও বাংলাদেশিদের আকুতি আসছে। কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন, তাঁরা এখন হাসপাতালে কিংবা হোটেলে আটকা পড়েছেন। কেউ আবার বেড়াতে গিয়ে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ জন রোগী কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তেহরানে যান। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাঁরা হাসপাতালে অবস্থান করছেন, তবে সেখানেও হামলা হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁদের আতঙ্কমুক্ত রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইরানে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যাঁদের মধ্যে ৪০০ জন আছেন তেহরানে। দূতাবাস ও ঢাকায় হটলাইন চালু করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন