logo
  • রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

শিরোনাম

  •     ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে বলবেন না ট্রাম্প

ইরান প্রশ্নে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ নেতানিয়াহু,নিরাপত্তা, রাজনীতি নাকি কৌশল?

অনলাইন ডেস্ক
  ২২ জুন ২০২৫, ১৪:৪৮
ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার কেন্দ্রে আবারও উঠে এসেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য ‘সরাসরি হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার দিকে আবারও দৃষ্টি দিয়েছেন। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এটি তার পুরোনো ও পরিচিত কৌশল।

নেতানিয়াহু বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নিরাপত্তা ইস্যুকে তার রাজনৈতিক অবস্থান সুসংহত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। তার নেতৃত্বে ইসরায়েল ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যার লক্ষ্য ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। এর জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। ফলে ২০২৫ সালে এসে ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব যেন এক নতুন মোড় নিয়েছে—যা কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, গোটা অঞ্চলকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

ইরাক যুদ্ধের ছায়া ফের ভাসছে?

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, “ইরাকের পরমাণু কর্মসূচি কেবল ইসরায়েলের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি।” তার সেই বক্তব্যের কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। যদিও পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়, সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের কাছে কোনো পরমাণু অস্ত্রই ছিল না।

তবুও নেতানিয়াহুর কৌশল একই ছিল: আগেভাগেই ব্যবস্থা না নিলে বিপদ অনিবার্য। এখন একই ধরনের আশঙ্কা ও ভাষ্য তিনি ইরান প্রসঙ্গে উপস্থাপন করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র—আশ্রয়ও, অস্ত্রও

নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতার কারণ শুধুই সামরিক সহায়তা নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কৌশলগত ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি যেমন ইসরায়েলের বড় নিরাপত্তার পেছনে, তেমনি ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারণী অঙ্গনে ইসরায়েলপন্থী শক্তিশালী লবিং গ্রুপও নেতানিয়াহুকে সাহস জোগায়।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়ে নেতানিয়াহু একদিকে যেমন বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে দেশের মানুষের সামনে দৃঢ় অবস্থান নিতে চান, অন্যদিকে দেশে তার রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার সুযোগও তৈরি করেন। বিশেষত ২০২৩ সালের পর থেকে তার সরকার বেশ কিছু বিতর্কে জর্জরিত হওয়ায়, এখন জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধের আবহে নিজের নেতৃত্বকে ‘অপরিহার্য’ হিসেবে তুলে ধরাই তার রাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম অংশ।

ইসরায়েল নিজেও পরমাণু শক্তিধর, তবুও স্বীকার করে না

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বৈতনীতি প্রশ্ন তুলে দেয়—ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও, দেশটি কখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে না। অথচ অন্য কোনো দেশ যদি একই পথে অগ্রসর হয়, তা ইসরায়েলের কাছে হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে ইরানকে নেতানিয়াহু ‘বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র মানে—কেউই নিরাপদ নয়।”

ইরান সরাসরি হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়—এমন অভিযোগ ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের। ফলে তাদের পরমাণু সক্ষমতা অর্জন ইসরায়েলের চোখে ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংকট’।


বিশ্লেষণ: নেতানিয়াহুর কৌশলের তিন স্তম্ভ

  1. নিরাপত্তা: শত্রুপক্ষকে আগেভাগে দুর্বল করা এবং ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা।

  2. রাজনীতি: নিজেকে ‘রক্ষাকর্তা’ হিসেবে তুলে ধরে জনগণের আস্থা অর্জন।

  3. কূটনীতি: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করা।

তবে এই কৌশল কতটা দীর্ঘমেয়াদে টিকবে, তা নির্ভর করবে বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, ইরানের জবাবদিহিতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চিত পরিস্থিতির ওপর।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
12