মহাকাশে নাসার রেকর্ড করা শব্দ কি ফেরেশতাদের জিকির? – বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় বিশ্লেষণ

সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মহাকাশ থেকে শব্দ রেকর্ড করার একটি যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে। এতদিন ধারণা করা হতো, মহাকাশ বায়ুশূন্য হওয়ায় সেখানে শব্দের অস্তিত্ব নেই। তবে নাসার গবেষকরা জানিয়েছেন, মহাকাশে বিভিন্ন কণা, নক্ষত্রের বিকিরণ এবং ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গের কম্পনকে বিশেষ সরঞ্জামের মাধ্যমে শব্দে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে।
নাসার “Our Universe Is Not Silent” শীর্ষক প্রতিবেদনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, মহাকাশে বিভিন্ন নক্ষত্রের বিকিরণ এবং গ্যাসীয় কণার মিথস্ক্রিয়ার ফলে এই শব্দের সৃষ্টি হয়। নাসার এই আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, কিছু ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিষয়টিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
নাসার রেকর্ড করা শব্দকে অনেকে ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। খ্রিস্টান গবেষকরা দাবি করেছেন, এই শব্দ তাদের ধর্মীয় সংগীতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে, কিছু মুসলিম গবেষক একে ফেরেশতাদের জিকিরের সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশের দুই গবেষক আলেম এ বিষয়ে তাদের মতামত জানিয়েছেন
মাসিক মদিনার সম্পাদক মাওলানা খালেদুজ্জামান বলেছেন, “হাদিস ও কোরআনে ফেরেশতাদের জিকিরের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে নাসার রেকর্ড করা শব্দকে নিশ্চিতভাবে জিকির বলা যাবে না। এটি হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। নিশ্চিত ব্যাখ্যা ছাড়া এমন দাবি থেকে বিরত থাকা উচিত।”
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এবিএম হিজবুল্লাহ বলেন, “নাসার আবিষ্কারকে ফেরেশতাদের জিকির বলা বোধগম্য নয়। এটি ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে বৈজ্ঞানিকভাবেই দেখা উচিত।
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে শব্দের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়, কারণ শব্দের জন্য মধ্যস্থ মাধ্যম প্রয়োজন, যা মহাকাশে নেই। তবে মহাকাশে বিদ্যমান ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গকে সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে তা শব্দে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী বিভিন্ন সুর তৈরি হয়, যা মানুষের কানে শোনা যায়।
নাসার মতে, এই রেকর্ডিংটি পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার ফল এবং এর সঙ্গে কোনো অতিপ্রাকৃত বিষয় যুক্ত নয়। তবে এটি মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা ভবিষ্যতে মহাজাগতিক কণা ও বিকিরণের ওপর আরও গবেষণার সুযোগ উন্মুক্ত করবে।
গবেষকরা মনে করেন, নাসার রেকর্ড করা শব্দকে শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত। এটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়াতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, নাসার এই আবিষ্কার বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেও, ধর্মীয় ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা এবং যাচাই প্রয়োজন। বিষয়টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলাদা করে বিবেচনা করাই সঠিক হবে।
জাগতিক /এস আই
মন্তব্য করুন