logo
  • বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুহাম্মদ ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন: হাতছাড়া হচ্ছে কি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সুযোগ?

অনলাইন ডেস্ক
  ০২ জুন ২০২৫, ১১:৫৯
সংগ্রহীত

বিশ্ববিখ্যাত নোবেলজয়ী ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৫ আগস্টের গণ-আন্দোলনের সময় প্যারিসে অবস্থানরত ইউনূস দেশে ফিরে ৮ আগস্ট বলেছিলেন, “বাংলাদেশের সামনে একটি অসাধারণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।” তবে ১০ মাস পেরিয়ে এলেও তাঁর নেতৃত্বে সেই সুযোগ বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না—বরং উল্টো প্রশ্ন উঠছে, এই সুযোগ কি পুরো জাতির জন্য, নাকি কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে?

ড. ইউনূসের কর্মকাণ্ড ঘিরে এখন তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী, কিছু নির্দিষ্ট ছাত্রনেতা এবং এমনকি বিদেশি শক্তির প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন, যা দেশের স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জনগণ আশা করেছিল, একজন নোবেলজয়ী হিসেবে তিনি সংকটকালে জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবেন। কিন্তু ১০ মাসের মাথায় দেখা যাচ্ছে, তিনি নিজেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। তাঁর বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা সব মামলা এক মাসের মধ্যেই প্রত্যাহার বা বাতিল হয়েছে, যেখানে সাধারণ রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানিমূলক মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে এখনো দীর্ঘসূত্রতা চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা নিষ্পত্তি হতে যেখানে ১০ মাস সময় লেগেছে, সেখানে ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে দ্রুততা অনেককেই বিস্মিত করেছে।

এছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ ও গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার হ্রাসসহ নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ছাড়পত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠছে—এসব সিদ্ধান্ত কি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার নয়?

এই সময়ের মধ্যে ড. ইউনূস ১০ বার বিদেশ সফর করেছেন, যা উন্নত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষেত্রেও বিরল। তবে এসব সফরে দেশের কী লাভ হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের দিল্লি থেকে ডেকে এনে ভিসা সংক্রান্ত অনুরোধ করলেও তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ গঠনকে কেন্দ্র করে। বলা হচ্ছে, জুলাই বিপ্লবের ছাত্রনেতাদের এই নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রতি ড. ইউনূসের পক্ষপাত রয়েছে। বিশেষ করে, এনসিপির উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মতো ছাত্রনেতাদের অন্তর্ভুক্তি তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র বাহিনী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও ড. ইউনূসের অনীহা স্পষ্ট। জাপান সফরে তিনি মন্তব্য করেন, "ডিসেম্বরে শুধু একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়"—যা পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে সমালোচিত হয়েছে। একইভাবে, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথগ্রহণে বিলম্ব, রাখাইন করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সব মিলিয়ে, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ড. ইউনূসের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা আশা করেছিলেন, তিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে দাঁড়াবেন। এখন সেই প্রত্যাশা প্রতারণার মুখে। জাতি চায়, ড. ইউনূস দ্রুত তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করবেন এবং সত্যিকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে আবারও মানুষের আস্থা ফিরে পাবেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
12