সংস্কার প্রস্তাবে ত্রিমুখী মতভেদ: কোথায় দাঁড়িয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যে মৌলিক সংস্কার নিয়ে মতপার্থক্য বেশ জোরালো।
বিএনপির অবস্থান: প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদ সীমা, দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নিষিদ্ধ, সংবিধান সংশোধনে গণভোট—এই প্রস্তাবগুলোর বেশিরভাগের বিরোধিতা করছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বিভিন্ন দলের ভিন্ন চিন্তা ও দর্শন রয়েছে—আমরা কি বাকশাল?” তিনি জানান, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জামায়াতের অবস্থান: অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বেশিরভাগ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ জানান, দ্বিতীয় দফার বৈঠকে চূড়ান্ত মত জানাবে তাদের দল। তিনি আশা করছেন, মতানৈক্য থাকা বিষয়গুলোও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব হবে।
এনসিপির অবস্থান: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোট কিংবা গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য ছাড়া রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য গণভোটই সবচেয়ে যৌক্তিক পথ।” এছাড়া নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনেও তারা একমত।
এনসিপি, জামায়াত ও বিএনপির মধ্যকার এ ভিন্নমত সংস্কার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদিও ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি আনতে তারা দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় বসবে জুন মাসে, আর সেখান থেকে উঠে আসবে চূড়ান্ত ‘জুলাই সনদ’। এখন দেখার বিষয়—রাজনৈতিক মতভেদের মধ্যেও একটি বাস্তবসম্মত সংস্কার পরিকল্পনায় পৌঁছাতে পারে কি না কমিশন।
মন্তব্য করুন