সিদ্ধিরগঞ্জে টায়ার পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাসিন্দারা

জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় প্রায় এক দশক ধরে পরিচালিত হচ্ছে পুরনো টায়ার বেচাকেনার ব্যবসা। এই ব্যবসাস্থল কেন্দ্র করে দখল করা হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিপুল পরিমাণ সরকারি জায়গা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টায়ার পুড়িয়ে মেরামতের কারণে ঝাঁঝালো গন্ধ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েকটি এলাকার দেড় লক্ষাধিক বাসিন্দা।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে সরকারি জায়গা দখল করে মজুদ রাখা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের হাজার হাজার পুরনো টায়ার ও ছোট বড় চাকা। দখল করা হয়েছে মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ। মাদানিনগর মাদ্রাসা থেকে শিমরাইল পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়ক বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন ভেতরের টায়ার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
এলাকাবাসী ও টায়ার ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, প্রায় দশ বছর আগে রাজধানীর ধোলাইখালের টায়ার ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিরগঞ্জে সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি দু'টি করে দোকান নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদানিনগর, সানারপাড় ও শিমরাইল আবাসিক এলাকা পর্যন্ত চারটি মার্কেটে শতাধিক দোকান ও কারখানা গড়ে তুলে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হয়।
পাড়া মহল্লার ভেতরেও বিভিন্ন ভবনের নিচতলায় এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন অনেকেই। এছাড়া সরকারি জায়গা দখলসহ মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ দখল করেও টায়ার ব্যবসার কার্যক্রম চলছে। এতে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে মেরামত করায় এর ঝাঁঝালো গন্ধ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এ্যাজমা ও চোখের রোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা। আবাসিক এলাকা থেকে পরিবেশ দূষণকারী টায়ার কারখানা দ্রুত উচ্ছেদের দাবি করছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
তবে টায়ার পোড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করলেও সরকারি জায়গা দখল এবং পরিবেশ অধিদফতরের কোন অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করেন টায়ার মার্কেট ব্যবসায়ীদের সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন।
জাগতিক নিউজকে তিনি বলেন, ‘এখানে মেশিনে হিট দিয়ে পুরনো টায়ার মেরামত করা হয়। তবে পোড়ানো হয় না। এখানে চারটি মার্কেটে একশ'র বেশি ব্যবসায়ী আছে। সরকারি কোন সংস্থার অনুমোদন নিতে কেউ কোন দিন উদ্যোগ নেয় নাই। যার যার মতো ব্যবসা করতেছে। কোন সংস্থা থেকেও আমাদের কাছে আসে নাই’।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখলের বিষয় স্বীকার করে জালাল উদ্দিন বলেন, ‘যার যার দোকানের সামনে রাস্তার সরকারি জায়গা ব্যবহার করছে। কোন লীজও নেয়া হয় নাই’।
বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অচিরেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবৈধ দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান পরিবেশ অধিদফতর ও সড়ক বিভাগের জেলা কর্মকর্তা।
পরিবেশ অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেন নি। অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া আমরা সেখানে পরিদর্শনে যাবো। যদি কোন দোকান বা কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে রি সাইক্লিং করা হয় সেক্ষেত্রে আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব’।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস সময় সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা অবমুক্ত করেছি। আবার তারা সেই জায়গা দখল করেছে। আমরা অচিরেই আবারও অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব’।
মন্তব্য করুন